মোঃ রোমান- ফরিদপুর প্রতিনিধি
গ্রামবাসীর নিজস্ব তহবিলে স্বেচ্ছাশ্রমে মধুমতি নদীর উপর প্লাস্টিক ড্রাম ও লোহা দিয়ে নির্মিত ভাসমান সেতু জনসাধারনের জন্য উন্মোক্ত করে দেওয়া হলো শনিবার সন্ধ্যায়। সাড়ে ৮শ মিটার লম্বা এ ভাসমান সেতু নির্মানে খরচ হয়েছে ৭০ লক্ষ টাকারও বেশি। সরকারি সহায়তা ছাড়া গ্রামবাসীদের দেওয়া টাকা থেকেই এই নির্মানের পুরো ব্যায় মেটানো হচ্ছে। ভাসমান এ সেতু নির্মানের মধ্য দিয়ে কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এ অঞ্চলের মানুষের এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নে নির্মিত হয়েছে কাক্ষিত এই সেতু।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান বলেন, দীর্ঘ দিন অবহেলিত মধুমতি নদীর বেষ্ঠিত সাত গ্রামে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে পিছিয়ে ছিলো। তাদের দাবি ছিলো একটি ব্রীজের। কিন্তু ব্যয় বহুল হওয়ায় সরকারি কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। যে কারণে স্থানীয়বাসি কোন উপায় অন্তর না পেয়ে নিজেদের চেষ্টায় তৈরী করলো স্বপ্নের সেতু। যার উপর দিয়ে চলাচল করবে ওই গ্রাম গুলো খেটে খাওয়া মানুষ ও তার পরিবার পরিজন।এলাকাবাসীর বহু প্রত্যাশিত ভাসমান এ সেতুটি ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাচান শিপন বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভাসমান সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গণজমায়েত নিষিদ্ধ। তাই জনসাধারণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আর অপেক্ষা না করে আজ থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।’
এদিকে সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়ার খবরে এলাকাবাসীর মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। ওই এলাকার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, মধুমতি নদীতে আগে খেয়া ঘাট ছিল। তাদের নৌকা দিয়ে অনেক কষ্ট করে নদী পারাপার হতে হতো। এখন সেতু খুলে দিলে তাদের আজন্ম দুর্ভোগ লাঘব হবে।
আলফাডাঙ্গা কামারগ্রাম আদর্শ ডিক্রী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কাশেম জানান, টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা, টিটা-পানাইল, রায়ের পানাইল, শিকরপুর, ইকড়াইল ও কুমুরতিয়া গ্রামের চারপাশে মধুমতি নদী বেষ্টিত থাকার কারণে গ্রামগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ওই ছয় গ্রামে প্রায় ১২ হাজার লোকের বসবাস। বংশ পরম্পরায় তাদের বছরের পর বছর নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। অনেক সময় বৈরি আবহাওয়ায় রুদ্ধ হয়ে যায় যাতায়াতের এ মাধ্যমও। এতে অনেক সময় মুমূর্ষ রোগী কিংবা জরুরি কাজে অন্যত্র যাওয়া মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় এমপি মনজুর হোসেন বুলবুল জানান, টগরবন্ধ ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামের মানুষের এই আজন্ম দুর্ভোগ থেকে রেহায় পেতে ওই এলাকার ৭০ জন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ৭০ লাখ টাকা দিয়ে তহবিল গঠন করে নির্মাণ করছে ভাসমান সেতুটি। প্লাস্টিকের ব্যারেল আর স্টিলের পাত দিয়ে ভাসমান এ সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। ৮শ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ সেতুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮৫২টি প্লাস্টিকের ড্রাম ও ৬০ টন লোহা। পরে দুই পাড়ে কংক্রিটের সংযোগ সেতুর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে ভাসমান কাঠামোটিকে।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষে সমস্যার কথাটি বিবেচনায় নিয়ে আমি এমপি হওয়ার পর থেকে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলছি স্থায়ী একটি সমাধানের । আশা করছি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন কওে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার গ্রামবাসি এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মানুষের মনোবল আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে অনেক অসম্ভবকে বাস্তবে রুপ দিতে পারে তার প্রমাণ দিয়ে টগরবন্ধের মানুষ।
তিনি বলেন, ‘মধুমতি নদীর উপরের গ্রামবাসীর উদ্যোগে যে ভাসমান ব্রীজ তৈরী করছে তা প্রশংসার দাবি রাখে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি লিখতো যাবে ওই স্থানে স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণ করার।’
তথ্য ও ছবি সংগৃহীত