মিডিয়া বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে করোনাভাইরাস জনিত সঙ্কটের সময় সংবাদকর্মী এবং মিডিয়ার জন্য বিশেষ সহায়তার বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ রবিবার তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বরাবরে দেশের পাঁচজন সিনিয়র সাংবাদিক একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে সংবাদপত্রের পাওনা বকেয়া সরকারি বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের দাবি জানানোর পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত সাংবাদিককে নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, করোনায় কোনো সংবাদকর্মী মারা গেলে অর্থ সাহায্য করা ও সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকার দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ ছুটিতে সারাদেশ যখন বন্ধ তখন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ইতিমধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারা দেশে ১৬ জনের মতো সংবাদকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সারা দেশে লকডাউনের কারণে সংবাদপত্রের প্রচার ও বিজ্ঞাপন আয়রে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় প্রিন্ট মিডিয়া আর্থিক সংকটে পড়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং সম্প্রচার অব্যাহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক মিডিয়া এই প্রেক্ষিতে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং মিডিয়ার বর্তমান আর্থিক সংকট উত্তরণের জন্য সরকার স্বতস্ফুর্তভাবেই এখনই যা ঘোষণা করতে পারেন- তাহলো-
ক. কোনো সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হলে নির্ধারিত হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
খ. দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন সংবাদকর্মী মারা গেলে তার ও পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য।
গ. বেকার সাংবাদিকদের তালিকা করে অবিলম্বে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ সহবিল এবং সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া।
ঘ. বেকার, বয়স্ক, অস্বচ্ছল, সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত রশেন কার্ড বরাদ্দ দেয়া। হকার, রাইন্ডার, ক্যাবল অপারেটরদের মাঠ কর্মীদেরও এই তালিকায় রাখা।
চিঠিতে আরো ৯টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তা হলো-
১। এই দুর্যোগ কালে মাঠে বা অফিসে সাংবাদিক শ্রমিক কর্মচারীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনতে হবে।
২। সবার বেতন-বোনাস নিয়মিত রাখতে হবে। কোন ছাটাই, লে-অফ করা যাবে না। এর মধ্যে যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
৩। আমরা সকারের কাছে সংবাদপত্রের পাওনা বকেয়া সরকারি বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।
৪। টেলিভিশন চ্যানেলের স্যাটেলাইট ফি মওকুফ বা বিলম্বিত কিস্তির বিষয় বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
৫। আগামী তিন মাস এর জন্য টেলিভিশন চ্যানেলের এবং সংবাদপত্রের সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য সরকারি অনুদান প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি।
৬। টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
৭। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
৮। এই সংকট মুহূর্তে সাংবাদিকদের কোনো বাড়িওয়ালা যেন হয়রানি না করে।
৯। সরকার যে প্রণোদনাই ঘোষণা করুন, সেটি যেন সারাদেশের মালি, সাংবাদিক, শ্রমিক-কর্মচারী সবার জন্যই অবারিত থাকে সেটিও নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম. শাজাহান মিয়া, আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ওমর ফারুক।