সানাউল্লাহ দোহা (কাতার)প্রতিনিধি।
২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বিশ্বকাপ ফুটবল এখনও আড়াই বছর দূরে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি যেভাবে গোটা পৃথিবীকে টালমাটাল করে চলেছে, তাতে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটিকেও উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। চিন্তাটা মূলত দর্শক উপস্থিতি নিয়ে।বিশ্বকাপ ফুটবল হলো বিশ্বমানবের মিলন মেলা। পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ এসে জড়ো হয় ফুটবল উৎসবে। কিন্তু করোনার কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়বে বিশ্ব, তাতে হয়তো দর্শক মধ্যপ্রাচ্যের ছোট এই দেশটিতে আসতে পারবে না। গত বুধবার বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির মহাসচিব হাসান আল থাওয়াদি এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না, তবে তার উদ্বেগটা গোপন রাখেননি, ‘এখনও পর্যন্ত কিছুই স্পষ্ট নয়। আমরা মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে একটা উদ্বেগ তো আছেই, আমরা এটা ভেবেই যে উদ্বিগ্ন যে দর্শকদের বিশ্বকাপে এসে অংশ নেওয়া বা বিশ্বকাপে শামিল হওয়ার সামর্থ্য থাকবে কি না।’
করোনাভাইরাসে বিশ্বের ক্রীড়াপঞ্জি একেবারেই ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত। ২০২০ টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে চলে গেছে ২০২১ সালে। আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল যে ইউরো ফুটবল ও কোপা আমেরিকার তাও পিছিয়ে চলে গেছে আগামী বছর। তবে কাতার আশাবাদী যে বিশ্বমানবতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মহামারিজনিত সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে। লিডার অব স্পোর্টকে আল থাওয়াদি বলেছেন, ‘আমি আশাবাদী যে ২০২২ সালের মধ্যেই আমরা সম্মিলিতভাবে এই মহামারির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো। আর এই বিশ্বকাপই হবে প্রথম সুযোগগুলোর একটি যেখানে আমরা মিলিতভাবে অংশ নেবো, এক হয়ে উৎসব করবো।
সব দর্শকের জন্য সাশ্রয়ী এক বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে কাতার। এরপরও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই করোনাভাইরাস যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্থবির করে দিয়েছে, তাতে ছোট তেল-উৎপাদনকারী ধনী দেশটির ওপর প্রভাব পড়তে বাধ্য। বিশ্বকাপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কাতারের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কাতার এয়ারলাইনসও কর্মী ছাটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও আল থাওয়াদি জোরালোভাবেই বলছেন সাশ্রয়ী বিশ্বকাপ আয়োজনে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ‘আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে আকর্ষণীয় বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়াবো না।এ ব্যাপারে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।বিশ্বকাপ ফুটবল সাধারণত হয় জুন-জুলাই মাসে, কিন্তু মরুরাজ্যের তীব্র গরম এড়াতে রীতির বাইরে গিয়ে ২০২২ বিশ্বকাপ হবে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। ততদিনে বিশ্বের বিমান ভ্রমণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটি।
বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারকে নানাভাবেই পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তিন বছর হলো, আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্র বাহরাইন, মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করেছে। এ কারণে বিশ্বকাপ আয়োজনটা দেশটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে থাওয়াদির দৃষ্টিতে এই কূটনৈতিক অবরোধ কাতারকে নিজেদের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখতে শেখাচ্ছে, ‘এটা আমাদের কাছে শাপেবর হয়েছে। আমরা আরও একাট্টা হতে পেরেছি, কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে কীভাবে লড়তে হবে সে ব্যাপারে আরও বেশি প্রস্তুত হতে পেরেছি।