করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে এপর্যন্ত ২৭ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন নারী চিকিৎসকও রয়েছেন। এর বাইরে করোনা উপসর্গে আরও ৫ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দেশের কয়েক হাজার চিকিৎসক। অভিযোগ উঠেছে করোনা সংকটের মাঝে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া এসব যোদ্ধাদের কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে যথাযত চিকিৎসা পাননি। কয়েক হাসপাতাল ঘুরলেও তাদের ভর্তিই করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে এ নিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ২৭ জন চিকিৎসক প্রাণ হারালেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরো পাঁচজন চিকিৎসক। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজারের উপর চিকিৎসক।
করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে সর্বপ্রথম মারা যান সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। ১৫ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ডা. মঈন শেষ মুহূর্তে এয়ার এম্বুলেন্স চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ১২ মে মারা যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আবুল মোকারিম মো. মহসিন উদ্দিন। রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত ৮ জুন মারা যান রাজধানীর বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শাখাওয়াত হোসেন মারা গেছেন।
ইমপালস হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. জলিলুর রহমান কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জুন।
গত ৮ জুন বরিশালের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের মালিক, বিশিষ্ট চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। কয়েক হাসপাতাল ঘুরেও তিনি চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৩ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হেমাটোলজিস্ট কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান মারা গেছেন।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ৭ জুন ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন মারা গেছেন। ৬৭ বছর বয়সী এই চিকিৎসক স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিস) ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট ছিলেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ব্যাচ কে-৩০) প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) মুহিদুল হাসান মারা গেছেন ৪ জুন।
এছাড়া ১৮ মে মারা যান ডা. আজিজুর রহমান রাজু, ২২ মে মৌলভীবাজারের প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. এমএ মতিন, একই দিনে মারা যান ডা. কাজী দিলরুবা খানম, ২৬ মে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহমান, একই দিনে মারা যান গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনা খান, ২৭ মে মারা যান অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন, ৩০ মে ডা. সাইদুর রহমান। ১ জুন মারা যান ডা. ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ বাবলু, ২ জুন প্রখ্যাত ইউরোলজিস্ট ডা. মঞ্জুর রশীদ চৌধুরী, ৩ জুন চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. এহসানুল করিম। একই দিনে মারা যান ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ও ডিজি হেলথের অবসরপ্রাপ্ত ইভালুয়াটার অফিসার ডা. একেএম ওয়াহিদুল হক। ৪ জুন মারা যান ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এসএএম কিবরিয়া। সর্বশেষ ১০ জুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ডা. তানজিলা রহমান। তিনি মেরিস্টোপস ক্লিনিকের মেটারনিটি বিভাগের হেড অব কোয়ালিটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া পাঁচ চিকিৎসক হলেন- অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক (অব.) আনিসুর রহমান, ডা. তাজউদ্দিন, ডা. সারওয়ার ইবনে আজিজ ও ডা. জাফর রুমি।