লেখকঃ অ্যাডভোকেট এম.মাফতুন আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতি, খুলনা।
আশি দশকের মধ্যভাগে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি। মেঘে মেঘে কেটে গেল অনেক দিন,অনেক বছর। এক ঊনপাঁজুরে জীবন। না পারলাম সাংবাদিক হতে,না পারলাম আইনজীবী হতে,না পারলাম চলমান সমাজে তথাকথিত রাজনীতিক সাজতে। তবুও নিরন্তর গতিতে এসব পেশার সাথে আজও জড়িয়ে আছি। যদিও কালের আবর্তে,সময়ের প্রেক্ষাপটে সব আশা ভেস্তে গেছে। তবুও দুরু দুরু মনে এগিয়ে চলি আগামির প্রত্যাশায়। নিরন্ন মনে ভাবি দেশে এসব হচ্ছে কী? প্রতিদিন এসব ঘটছে কী? জাতির আগামির ভবিষ্যত কী? কোন খাদের কিনারায় এগিয়ে চলেছি আমরা। আলোচ্য প্রবন্ধটি কি শিরোনামে দিয়ে লিখব কিছু ভেবে পায় না। আলোচ্য কলামটি লিখতে যেয়ে বারংবার মনে পড়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা। তিনি পরাধীন ব্রিটিশ শাসন-শোষনের বিরুদ্ধে কলমের ঝংকার তুলেছিলেন;বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সেই বিদ্রোহের ঢেউ আমার কোমল হৃদয়কে যেন বিদ্রোহি করে তোলে। হাল জামানায় ভয় সত্যিই আমাকে তাড়া করে। নানাভাবে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ি। প্রসঙ্গত লিখতে যেয়ে মনের মুকুরে অনেক কথা ভেসে আসে। একদা যুধিষ্ঠিরকে এক ভক্ত জিজ্ঞেস করেছিলেন,জগতে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় কী? যুধিষ্ঠি জবাবে বলেছিলেন, “সব মানুষ মরবে অথচ একথাটি সে ভুলে থাকে। এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়”। পৃথিবীতে মৃত্যুই সত্য। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি মানুষের মৃত্যুটা যেন হয়। চলমান ব্যবস্থায় অনেক কথা মুখে বলতে পারি না। সত্য কথা লিখতে পারি না। ডিজিটাল আইনের ভয়ে কলম যেন থমকে যায়। তাই নজরুলের ভাষায় বলতে হয়ঃ “…..বন্ধু গো আর বলিতে পারি না বড় বিষ জ্বালা এই বুকে দেখিয়া শুনিয়া খেপিয়া গিয়াছি। তাই যাহা আসে কই মুখে। রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’মাথায়, বন্ধু,বড় দুখে অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে”……। তাই যা মনে আসে তাই লিখে যাই এতসব লেখা। শিরোনামটি দেখে অনেকে ভাবতে পারেন “লজ্জার লজ্জা” আবার কী? প্রিয় পাঠক এবার বলুনতো আপনার শরীরের সবচেয়ে লজ্জা বা গোপন স্থান কোনটি? যা আপনার অঙ্গে সম্মানের সাথে আবৃত করে রেখেছেন? যে অঙ্গটি সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র মানব সৃষ্টির জন্য আপনাকে দিয়েছেন। সেই লজ্জাকর জায়গাটি আমাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাÐে কী আজ লজ্জা পাচ্ছে না? কোথায় সুনীতি? সত্য বাবু অনেক আগেই মারা গেছে। সুনীতি নির্বাসিত। ঘরে-বাইরে দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত। আর জবাবদিহিতা! কার কাছে কে ফরিয়াদ করবে? এদেশে সবাই নেতা,সবাই ভি.আই.পি। অভিন্ন চরিত্র। একযোগে আখের গোছাতে ব্যস্ত। দলবাজীতে অভ্যস্ত। পদ-পদবী দখলে তটস্থ। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাহীনতা,মানুষের নৈতিকতা,মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়া,অতঃপর চলছে বিচারহীনতা সংস্কৃতি। বিচার চলছে কচ্ছপ গতিতে। শুধু নুসরত হত্যাযজ্ঞের দ্রæত বিচারে বাহবা নয়,হাজার হাজার স্পর্ষকাতর নুসরাতের বিচার ফাইলবন্দি হয়ে আছে। শত শত বিচারের বাণী আর নিভৃত্বে নয়,প্রতিটি অপরাধির দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। তখনই বলব দেশে সুনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,মানুষ ন্যায় বিচার পেতে শুরু করেছে। আমরা কী না করতে পারি? দুটো টাকার জন্য মিনিটে ভড়ং পাল্টাতে পারি। সামান্য পদ-পদবি পেলে দেশ বিক্রি করে দিতে পারি। পত্রিকায় নানা শিরোনামে খবর এসেছে। রাজাকারের ছেলে দেশে এখন বড় মুক্তিযোদ্ধা। আমার কাছে এমনও অভিযোগও আছে যে,’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ধারের কাছে যায়নি,সে এখন হয়েছে বড় যোদ্ধা! এই অনৈতিকতায় হাত বাড়িয়েছে শুধুমাত্র বেতন-ভাতা নানা সুযোগ সুবিধার আশায়। পিতার কাছে সন্তান নিরাপদ নয়,পিতার হাতে ধর্ষিত হচ্ছে কন্যা। অথচ একজন সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা তাঁর মা-বাবা। মায়ের পরকীয়ায় বলি দুগ্ধপোষ্য সন্তান,বাবা ছেলেকে হত্যা করছে, চলছে ঘরে-বাইরে নৃসংশতা,বর্বরতা,পাশবিকতা। বাড়ির চাকর-চাকরানি রাজনৈতিক দলের নেতা। এক সময়ের মুরগী চোর,রিক্স চোর সিÐিকেট চক্রের হোতা এখন রাজনৈতিক দলের নেতা। শত শত কোটি টাকার বিত্ত-বৈভবের মালিক। এসব নৈতিক স্খালন। গুরুত্বর সামাজিক অবক্ষয়। একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে এসব ভাবি। ভাবতে ভাবতে নিজেকে বলি “এসব লজ্জার লজ্জা”।