লেখকঃ মোঃ রায়হান আলী, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী, খুলনা।
মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান দুটি উৎসব হল ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা। এ দুটি উৎসবের আয়োজন চলে বেশ আগে থেকেই। ঈদ আসার আগে থেকেই পরিবার কর্তারা তাদের পরিবার তথা ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা এবং পর্যায়ক্রমে আত্মীয়-স্বজনদের ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিবার কর্তার এমন আয়োজন সত্যিই খুব কঠিন ব্যস্ততম একটা সময়। তারপরও পারিবারিক দ্বায়-দায়িত্বের উপর ভিত্তি করে এমন দায়িত্ব পালনে প্রানন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটাকে চুড়ান্ত সফলতা দিতে হয়। পরিবার কর্তার অধিনস্ত সকল সদস্যদের মুখের হাসি কি করে ফুটে তোলা যায় সেটার প্রচেষ্টাই তিঁনি নিজেকে উজার করে দিতে ব্যস্ত থাকে। পরিবার কর্তার এমন সফলতাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেখে কাকে কি পোষাক দিল আর কার জন্য কতটুকু কম পড়ল। কয় জন সদস্য জিজ্ঞেস করে যিনি এত কিছুর মধ্যে সবার হাসির আসায় নিজেকে উজার করল তাঁর নিজের জন্য কিছু কিনেছে কিনা? হয়তবা এমন প্রশ্নটা খুবি-ই কম করে। নিজের সন্তান,সংসার কিংবা পরিবারের জন্য যে লোকটা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে সব বিল-বোনাস দিয়ে হলেও সংসারের হাসি ফোঁটাতে বদ্ধ পরিকর তাঁর কথা কেউ কি চিন্তা করে? নিশ্চয় না। সমাজে যাঁরা নিজেকে মানুষ না ভেবে সংসার,সন্তান ও সম্পত্তি নিয়ে সারা জীবন বিলিয়ে গেছেন তাঁরা তো বিলানোই দেখেন কিন্তু এর স্বাদ হিসেবে হয়ত শেষ বেলা ঘৃনা আর সম্মানজনক অপমানেই পান। হয়তবা এটাই তার জন্য এ জগতে উপহার কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার উপহার তো তাঁর জন্য ওপারে অপেক্ষায় রেখেছে। এমন হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সংসারের সুখ সার্ভিস দেওয়া লোকটা ঈদের দিন আগের বছরের পুরাতন পোষাকগুলো পড়েই ঈদের নামাজ পড়তে যায়। সে তো নতুন পোষাকের জন্য কাউকে বলতে পারে না। এমন পরিবার কর্তাদের কাছে ঈদ মানে ঝামেলা আর নিরানন্দ বটে।সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করা একজন পিতার গুরুদায়িত্বের মধ্যে পরে। সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হওয়া পিতা হয়তবা কোন দিন আর সুখের দেখা পায় না। সন্তানরা বড় হয়ে আপগ্রেড আধুনিকতা শিখতে শুরু করে তখন পিতা-মাতা হয় ব্যাকডেটেট ভার্সন। বৃদ্ধাশ্রমের বেশিরভাগ মা-বাবাদের সন্তান উচ্চ শিক্ষিত। ভাল মানের সার্ভিস করে। এসব বৃদ্ধাশ্রমের মা-বাবাদের ওখানে জায়গা হয়েছে কেন জানেন? সন্তানদের উচ্চ শিখরে পৌছতে জীবনের সর্বস্ব বিলিন করে মানুষ করতে পারা। যার ফল স্বরুপ আজকের ঠিকানা হয়েছে বাবা-মায়ের বৃদ্ধাশ্রম। এসব আশ্রমে উচ্চ শিক্ষিত অফিসারের বাবা-মায়ের স্থানেই বেশি হয়। নিম্ন মধ্যবিত্তরা বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের এত বড় অফিসার বানাতে পারে না ফলে তাদের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে কম-ই হয়। অনেক পরিবার কর্তাদের ঈদ আসলে মনে পড়ে তাদের হারানো স্বজনদের। ফিরে তাকায় অতীত জীবনের হারানো স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দঘন মুহুর্ত। এসব অতীত মনে করে ঈদের দিনটি হয়তবা চোখের জলে ছলছল হয়ে থাকে।ঈদের ছুটিতে সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবীরা মা-মাটির টানে তাদের প্রানের স্পন্দন মা-বাবা,পরিবার-পরিজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে যায়। কিন্তু অনেক সরকারী-বেসরকারী,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য,ডাক্তার-নার্স কিংবা জরুরী পরিসেবার আওতাভুক্তদের ঈদ উদযাপন করতে হয় নিজ নিজ কর্মস্থলেই। দায়িত্ব পালনের কাছে যে তাদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।