প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় হারিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পরিবার। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি ঘর। বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পাহাড়চূড়ায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা যেমন বেকায়দায় রয়েছেন, তেমনি পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা সমতলভূমিতে যারা রয়েছেন তারাও সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন চলতি বর্ষা মৌসুমে। আইওএম কর্মকর্তা এবং ভলান্টিয়াররা এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসস্থলগুলো মেরামত এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি আশ্রয়স্থলে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ের উঁচু টিলায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের আরও বসতঘর ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় প্রশাসন। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরতদের সতর্ক করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করেছে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন।
তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার রোহিঙ্গাদের বিকল্প স্থানে সরানোর প্রস্তুতি তাদের আছে। ইতোমধ্যে নতুন দুটি ক্যাম্প স্থাপন করে চার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার সরিয়ে নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আরআরআরসি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, কয়েক দিন ধরে টেকনাফে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে নিচু ভূমিতে গড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরতদের সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। ক্যাম্পে কমর্রত এনজিওদের বলা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা তৈরি করতে। পরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে যারা তাদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জমান চৌধুরী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো চিহ্নিত করে তাদের সেখান থেকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এরইমধ্যে কয়েকটি ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে উখিয়ার অনেক ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
এদিকে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে টেকনাফের শালবন, লেদা, মুছনি, জাদিমুড়া, নয়াপাড়া, উনচিপ্রাং এবং উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার অন্তত ৩ হাজার ঝুপড়ি ঘর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ছোট ছোট আকারের পাহাড়ধসের কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজারের অধিক ঝুপড়ি ঘর। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে দুর্ভোগে পড়েছে বিপুল সংখ্যক আশ্রিত রোহিঙ্গা, যাদের বসতঘরের মেঝে বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় ভরে গেছে। ফলে অনেককেই কাটাতে হচ্ছে নির্ঘুম রাত।
বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মুহিব্বুল্লাহ বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা থেমে গেছে। কোনো কোনো ক্যাম্পে রান্নাবান্নার অবস্থাও নেই, সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। তা না হলে ক্যাম্পের হাজার হাজার লোক চরম খাদ্য সংকটে পড়বে।
এদিকে গত শুক্রবার (৫ জুলাই) ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ঘরের দেয়াল চাপায় মোস্তফা খাতুন (৬০) নামের এক রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু হয়েছে। উখিয়ার কুতুপালং দুই নম্বর ক্যাম্পে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কুতুপালং আন-রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ নূর জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বর্ষণ হওয়ায় শুক্রবার ভোরে ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মোস্তফা খাতুন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মোস্তফা খাতুন ওই শরণার্থী শিবিরের মৃত আবু বক্করের স্ত্রী।