মাসুদ রানা:
চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানাধীন বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ীর এএসআই কামরুল হাসান কর্তৃক গত ২৯ এপ্রিল গিরিধারী চৌধুরীকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের নেপথ্যে জানাযায়, গত ১৮ মার্চ ২০২০ ইং তারিখের মারামারির একটি ভিডিওকে গত ২৯ এপ্রিল টেরীবাজারে নিহত কাপড়ের দোকান কর্মচারী গিরিধারী চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনার ভিডিও বলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া তথা ফেইসবুকে ভাইরাল হয়, প্রকৃতপক্ষে ভাইরাল হওয়া মারামারির ভিডিও এর ভিকটিম মুড়ির দোকানের কর্মচারী অপু পাল (৩০) এবং নিহত গিরিধারী চৌধুরী (৬২) দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি এবং ঘটনাও ভিন্ন।
টেরীবাজারের সিকিউরিটি গার্ড, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, গত ২৯ এপ্রিল ২০২০ইং বিকাল ১৭.৪৫ ঘটিকায় সরকার ঘোষিত লক ডাউন চলাকালীন টেরীবাজারের সিকিউরিটি মোঃ মাসুদ আলম (৩২) ডিউটিরত এএসআই কামরুল হাসানকে জানায়, মার্কেট বন্ধ অবস্থায় কাপড় চুরির চেষ্ঠাকালে তিনি চোরাই মালসহ ০২ জন লোক আটক করেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা (গিরিধারী এবং নিখিল দে) মালামালগুলো ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে পুলিশ মালগুলো পুরাতন বিটের খালী জায়গায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন সিকিউরিটি এবং গিরিধারী চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হয়। পুলিশ গিরিধারী চৌধুরীর মালিককে ফোন করতে বললে, সে কাঁপতে থাকে এবং বুকে ব্যাথা করছে বলে অসুস্থাবোধ করায় পুলিশ উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দোকান কর্মচারী গিরিধারী চৌধুরী মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শী সিকিউরিটি, স্থানীয় ব্যবসায়ীগনের সাথে আলাপ এবং টেরীবাজারের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ যাচাই করে গিরিধারী চৌধুরীকে মারধর, আঘাত কিংবা গ্রেফতারের বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই। গিরিধারী চৌধুরীর ময়না তদন্ত রিপোটেও গিরিধারী চৌধুরীকে আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ নাই।
এ বিষয়ে নিহত গিরিধারী চৌধুরীর পরিবাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা এবং তার মৃত্যুতে কারো হাত নেই বিধায় তারা কারো প্রতি কোন মামলা/অভিযোগ করেন নাই। স্থানীয়রা জানান, গিরিধারী চৌধুরী পূর্ব হতে হার্টের রোগী ছিল এবং পূর্বে আরো ০২ বার স্ট্রোক করেছেন। সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব মোঃ মেহেদী হাসান কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি পুলিশ কর্তৃক গিরিধারী চৌধুরীকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের সত্যতা পান নি, তবে গিরিধারী চৌধুরীর সঙ্গীয় নিখিলদে এবং রিক্সা চালককে চর থাপ্পরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তবে নিখিল দে এবং রিক্সাচালক মোঃ জামাল উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রতিবেদককে জানান, পুলিশ কর্তৃক তাদের কোন আঘাত করা হয় নি।
স্থানীয়ভাবে জানাযায়, গত ১৮ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার একটি কাভার্ডভ্যান রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে রাস্তা জ্যাম করতঃ মুড়ির বস্তা আনলোডকালে ডিউটিরত কনস্টেবলগনের সাথে অপু পাল (৩০) এর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে অপু পাল টহল পুলিশকে ধাক্কা মেলে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে এসআই বাবলু কুমার পাল এবং এএসআই কামরুল হাসান অপু পালকে গ্রেফতারকালে অপু পাল আঘাতের চেষ্টাকালে এএসআই কামরুল হাসান কয়েকটা চরথাপ্পড় মেরে অপু পালকে থানায় নেয় এবং পরের দিন কোর্টে চালান করেন।
অপু পালের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অপু পাল প্রতিবেদককে বলেন, ভুল বুঝাবুঝির কারণে উক্ত অনাকাঙ্খিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে বিধায় তিনি কারো বিরুদ্ধে কোন মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ করেন নাই এবং এবিষয়ে আইনগত প্রতিকার চান না বলে জানায়।
স্থানীয়ভাবে আরো জানাযায়, পরিচ্ছন্ন ও জনবান্ধব এএসআই কামরুল হাসান বক্সিরহাট ফাঁড়ীতে কর্মরত থাকাবস্থায় জামায়াত শিবির, বিএনপি অধ্যুষিত টেরীবাজার এলাকার প্রচুর শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেন। তার কারনে টেরীবাজার এলাকায় কোন জামায়েত শিবির কিংবা বিএনপি কোন লোকজন নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারে নাই।এলাকায় বখাটে ছেলেদের আড্ডা এবং কিশোর গ্যাং এর তৎপরতা কমে যায়।
এছাড়াও তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী এবং ইভটিজিংকারীকে গ্রেফতার করায় সিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহবুবর রহমান এর নিকট হতে পুরস্কৃত হন। ফলে উক্ত এলাকার কিছু কুচক্রি মহল এবং মাদক ব্যবসায়ী অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য ফেইসবুকে মিথ্যা অপপ্রচার করে তাকে অন্যত্র বদলী করেন।
এএসআই কামরুল হাসান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে জানাযায়, তিনি বর্তমানে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কর্মরত আছে এবং তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার এবং তার বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘঠনার বিভিন্ন তদন্ত ও স্থানীয় জনমতে জানাযায়, এএসআই কামরুল হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ।পরিশেষে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমানিত হলেও জনমনে প্রশ্ন- নির্দোষ জনবান্ধব পরিশ্রমি ও পরিচ্ছন্ন এএসআই কামরুল হাসান তার হারানো সামাজিক মান মর্যাদা ফিরে পাবে কি?