সোহেল রানা, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি। বিদেশে দেশের মানুষের অভিভাবক বলা হয়ে থাকে সেদেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাসকে। তাই প্রবাসীদের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা থাকে দূতাবাস পরিবারের কাছে। সব প্রত্যাশা পূরণ হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস পরিবার বিগত ৬ বছর প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণে ছিল স্বচেষ্ট। বিগত ৬ বছরের সেবা ও বিদায়ি হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা পাভেল সারওয়ার সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসে লিখেছেন, বিদেশের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের হাইকমিশন। আর হাইকমিশনার হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। আমরা মালয়েশিয়া প্রবাসীরা পেয়েছিলাম একজন মানবিক হাইকমিশনার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত দেশটিতে বাংলাদেশের দূত হিসেবে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকমিশনারের দায়িত্বে আসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯৮৪ ব্যাচের পেশাদার কূটনীতিক মহ. শহীদুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্স এবং বেলজিয়ামের ইউনির্ভাসিটি লিব্রে ডি ব্রুসেলস থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে দ্বিতীয়বার মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করা এই কূটনীতিক মালয়েশিয়ায় আসার পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন, অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ নানা বিষয়ে কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীরা ‘তাদের কর্ম, শিষ্টাচার, মেধা ও প্রজ্ঞা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন বাংলাদেশিরা। বিগত ৬ বছরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলো গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে হাইকমিশনার বেশ কিছু কাজ করেছেন। যেমন: ডিজিটাল পাসপোর্ট সেবা: ডাক যোগে পাসপোর্ট আবেদন পাঠিয়ে দেওয়া। এরপর অনলাইনে ডেলিভারি স্লিপ জানা এবং অনলাইনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট বিতরন। এইসব কাজ ঘরে বসেই করা যাচ্ছে। ফলে দালালদের কাছে যেতে হচ্ছে না। কিন্তু ক্ষেপে গেছে কিছু দালাল ! চালিয়ে যাচ্ছে অপপ্রচার। চলমান করোনা কালীন সময়ে মালয়েশিয়া থেকে চাকরি হারিয়ে কাউকে দেশে ফেরত যেতে দেন নি। কোম্পানি পরিবর্তন করার সুযোগ এনে দিয়েছেন যা কখনোই ছিল না। হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলামের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার সকল অবৈধদের বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি যারা ক্যাম্পে বা জেলে আছে তাদেরকেও বৈধতা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সরাসরি কোম্পানিতে লোক নিয়োগ যা আগে ছিল এজেন্ট, দেশ থেকে লোক এনে জিম্মি করে রাখত , ইচ্ছামত কাজ দিত। সেটা তিনি বন্ধ করেছেন তাই কোন আদম বেপারী এই বিষয়টি পছন্দ করেনি। কর্মীদের জন্য সুরক্ষা দিয়ে নিয়োগ চুক্তি করেছেন যেটাতে কর্মী ও কোম্পানি সই করে কোন এজেন্ট বা দালাল নয়। ব্যাংক একাউন্টে বেতন দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছেন, যাতে এজেন্ট বা দালাল বেতন থেকে টাকা কেটে নিতে না পারে। নিরাপদ আবাসন এর ব্যাবস্থা করেছেন সরাসরি কোম্পানির অধীনে। যা আগে ছিল এজেন্টের অধীনে ফলে এজেন্ট অনেক টাকা কেটে নিত। মালয়েশিয়া সরকারের নিকট বাংলাদেশের লোক পাঠানোর কোন আইনি স্বীকৃতি ছিল না, হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম এসে সে স্বীকৃতি আদায় করেছেন এবং বাংলাদেশকে মালয়েশিয়া লেবার সোর্স কান্ট্রির স্বীকৃতি দেয়। ২০০৬/৭ সালে বিএনপির আমলে এজেন্টরা অনেক বেশি লোক এনে রাস্তাঘাটে ছেড়ে দিয়েছিল, কোন থাকা খাওয়া কাজের ব্যাবস্থা ছিল না। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ২০১৭ সালে লোক এসেছে সরাসরি কোম্পানির অধীনে ফলে সে রকম বাজে অবস্থা হয় নি। (ফলে বাংলাদেশি এজেন্টরা খুব ক্ষিপ্ত)। শহীদুল ইসলাম মালয়েশিয়াা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশী কর্মীদের যেন পেনশন দেওয়া হয় যাতে কাজ শেষ করে দেশে ফেরত গেলে আজীবন পেনশন পায়। মালয়েশিয়া সরকার রাজি হয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কর্মীদের সেভিংস এর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন, যেন কাজ শেষে দেশে ফেরার সময় খালি হতে না ফিরে যেতে হয়। এসব কাজ আগে এজেন্টরা করত । এখন করতে পারে না তাই তারা খুব ক্ষিপ্ত। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া পণ্য রপ্তানি ছিল ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিগত ৬ বছরে বেড়ে হয়েছে ২৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । করোনা না হলে তিনশর কাছাকাছি হত। সর্বশেষ, পাসপোর্ট সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা ভবন নিয়েছেন যেখানে ৮ শ লোক বসতে পারে , এসি রোমে। যা মালয়েশিয়ার দূতাবাসের ইতিহাসে এই প্রথম । তারপরও শুনাযায় হাইকমিশন কিছু করে না!!! তারা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে! মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ করে রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে তিন লাখের বেশি বাংলাদেশী অবৈধ লোক বৈধতা পায়। ( এত গুলো লোক দেশে ফিরে গেলে কি হত!) কিছু লোক অবৈধ ছিল কিন্তু জেল জরিমানার কারণে দেশে ফিরে যেতে পারছিল না । সরকারকে বলে তাদের নাম মাত্র জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন। যার নাম দেয়া ছিল ব্যাকফর গুড কর্মসূচী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়া সরকারকে বাংলাদেশের পক্ষে থাকা, জাতিসংঘে কথা বলা এবং কক্্রাজারে ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালনা করার মত কাজ করে নিতে পেরেছেন শহীদুল ইসলাম। সর্বশেষ : যারা ছুটিতে দেশে গিয়ে আটকে আছে, অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে,তাদেরকে মালয়েশিয়া ফেরত আসা এবং কাজে যোগ দেবার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারকে রাজি করিয়েছেন এবং তারা সকলেই ফিরতে পারবে। তবে মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার সিদ্ধান্ত দিতে সময় নিয়েছে। হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ওমানে নিযুক্ত হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছেন তিনি। এদিকে মালয়েশিয়ায় ঠিক কতো বাংলাদেশি রয়েছেন তার কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানও নেই দূতাবাসের কাছে। তবে অনুমান করা যায়- বৈধ, অবৈধ মিলে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াবে। শ্রমিকদের পাশাপাশি বর