সানাউল্লাহ, দোহা(কাতার)প্রতিনিধি।
উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের দ্বন্দ্ব, বিভক্তি ও বিরোধের অবসান হতে যাচ্ছে। আর এই সংবাদে উপসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশে নাগরিক ও বিদেশিদের মনে নতুন আশা ও আনন্দের সঞ্চার হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
মার্কিন সরকারের উপদেষ্টা ও ট্রাম্পে জামাতা কুশনারের সফরে এই অবরোধের অবসান হবে, এর ইঙ্গিত অবশ্য আগেই দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এই ধারাবাহিকতায় বুধবার কাতারের আমির শেখ তামিমের সাথে সাক্ষাত করেছেন কুশনার।
কাতারসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বুধবার দুপুর থেকে জানাচ্ছে, বুধবার মধ্যরাতে অথবা বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতির মাধ্যমে কাতার অবরোধের নিষ্পত্তি ঘোষণা করবে। একই সময়ে বিবৃতি দেবে সৌদিআরব, বাহরাইন ও আরব আমিরাত।
তবে মিসরের ভূমিকা এখনো স্পষ্ট নয়, আশা করা যাচ্ছে- মিসরও যোগ দেবে এই দেশগুলোর সঙ্গে।
২০১৭ সালের ৫ জুন পবিত্র রমজানে আকস্মিকভাবে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় সৌদিআরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর।
সাথে সাথে কাতারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এই দেশগুলোর আকাশ, জল ও স্থলসীমা। বন্ধ করে দেওয়া হয় সৌদি, আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরে কাতারের দূতাবাস, আর কাতার থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় অবরোধকারী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদেরকে। ঘটতে থাকে আরও অনেক লজ্জাজনক ঘটনা, যা কখনো এই অঞ্চলবাসীর কল্পনায়ও ছিল না।
এমনকি ওই দেশগুলোতে অধ্যয়নরত কাতারি শিক্ষার্থী ও নাগরিকদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর কাতারে বসবাসরত ওই দেশগুলোর নাগরিকদেরকে দ্রুততম সময়ে ফিরে যেতে আদেশ দেওয়া হয়। কাতারের চ্যানেল দেখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, কাতারের পক্ষে কোনো কিছু লিখলে বা বললে জেল-জরিমানার বিধানও কার্যকর করা হয় অবরোধকারী দেশগুলোতে।
গত সাড়ে তিন বছরৈর বেশি সময় ধরে কুয়েত ও তুরস্ক এবং ওমানসহ নানা দেশের বিভিন্ন চেষ্টায়ও সমাধান হয়নি এই বিরোধের।
তবে কাতার কখনোই এই অন্যায় অবরোধের কাছে হার মানেনি। অবরোধকারী দেশগুলো কাতারকে বিভিন্ন শর্ত বেঁধে দিলেও কাতার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কখনো অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করবে না কাতার। কাতারের এই দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ায় ইরান, তুরস্কসহ অন্যান্য কিছু দেশ।
গত সাড়ে তিন বছরে অবরোধকারী দেশগুলোর ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি কাতারের বিরুদ্ধে। এমনকি কাতার দখলেরও পরিকল্পনা করেছিল সৌদিআরব, যা কুয়েতের প্রয়াত আমির ও মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়।
কাতার অবরোধ সমাধানে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন কুয়েতের প্রয়াত আমির শেখ ছাবাহ।
এখন এই কাতার অবরোধের নিষ্পত্তি হলে কাতারের আকাশসীমা যেমন খুলে যাবে সৌদি, আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসরের জন্য। ঠিক তেমনিভাবে এই দেশগুলোর আকাশসীমানাও খুলে দেওয়া হবে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য।
খুলে যাবে কাতার-সৌদি স্থল সীমান্ত। আবার আগের মতো ভিসা বা পূর্ব অনুমতি ছাড়া সৌদিআরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইনে যেতে পারবেন কাতারি নাগরিকেরা। আর কাতারে বসবাসরত বিদেশিরা পাবেন সহজে উমরাহ পালনের সুযোগ। খুলে যাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা, সব মিলিয়ে শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়ের।
তবে গত সাড়ে তিন বছর ধরে বিরাজমান এই বিভক্তি ও পারস্পরিক তিক্ততা উপসাগরীয় অঞ্চলবাসী কত দ্রæত ভুলে যেতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।