যুক্তরাজ্যের একটি তেল ট্যাঙ্কার আটক করেছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। ইরানের দাবি, পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালিতে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘন করায় ট্যাঙ্কারটি আটক করা হয়েছে।
ইরানি গণমাধ্যম পার্স টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইআরজিসির জনসংযোগ দপ্তর স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের হরমুজগান প্রদেশের বন্দর ও সামুদ্রিক যান চলাচল বিষয়ক সংস্থার অনুরোধে ‘স্টেনা ইমপেরো’ নামের একটি ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ আটক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের প্রতি সম্মান না দেখানোয় ইরানের ওই সংস্থা তেল ট্যাঙ্কারটি আটকের অনুরোধ জানায় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
হরমুজ প্রণালীতে ইরানি ড্রোন ধ্বংসের মার্কিন দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের কিছু সময় পরেই যুক্তরাজ্যের ট্যাঙ্কারটি আটকের খবর দেয় আইআরজিসি।
জিব্রাল্টার প্রণালিতে ইরানের একটি তেল ট্যাঙ্কার আটকে রেখেছে যুক্তরাজ্য।
এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট হরমুজ প্রণালি থেকে আরেকটি ব্রিটিশ তেল ট্যাঙ্কার আটকের খবর দিয়ে বলেন, দুটি ট্যাঙ্কার আটকের ঘটনা ‘অগ্রহণযোগ্য’।
গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, পারস্য উপসাগর থেকে আটক করা ব্রিটিশ পতাকাবাহী তেলের ট্যাঙ্কার না ছাড়লে ইরানকে এর ‘কঠিন পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
তবে একইসঙ্গে তিনি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে জানান, লন্ডন তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছে।
এদিকে ইরানের সংশ্লিষ্ট সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রেসটিভি জানিয়েছে, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ‘মাসদার’ নামের আরেকটি ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজের কাগজপত্র ও গতিপথ যাচাই-বাছাই সেটিকে ছেড়ে দিয়েছে আইআরজিসি।
এদিকে ব্রিটিশ তেল ট্যাঙ্কার আটক করার পর গতকাল শুক্রবার রাতে জরুরি বৈঠক করেছে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লন্ডন এ ব্যাপারে আরো বেশি তথ্য সংগ্রহ ও গোটা পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করার চেষ্টা করছে।
ইরানের আইআরজিসি শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের তেলবাহী জাহাজটি তিনটি আইন লঙ্ঘন করেছে। ট্যাঙ্কারটি আন্তর্জাতিক পানিসীমা থেকে ইরানের পানিসীমায় ঢুকে পড়েছিল, নিজেকে শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রেখেছিল এবং আইআরজিসির পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তেল ট্যাঙ্কারটি আটক করে ইরানের উপকূলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য এটিকে হরমুজগান প্রদেশের বন্দর ও নৌচলাচল বিষয়ক সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে তেল ট্যাংকারটিতে ২৩ জন ক্রু থাকলেও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে একজনও ব্রিটিশ নাগরিক নয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইরানের বিচার বিভাগের নির্দেশে আইআরজিসি পারস্য উপসাগর থেকে তেল চোরাচালানে জড়িত একটি বিদেশি তেল ট্যাঙ্কার আটক করে। ইরানের জাতীয় স্বার্থ ও পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা রক্ষা এবং চোরচালান প্রতিহত করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে আইআরজিসি জানিয়েছে।