শুক্রবার থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার ৪৪তম আসর। এবারের প্রতিযোগিতা হচ্ছে হ্যান্ড টাইমিংয়ে এবং জীর্ণ-শীর্ণ এ্যাথলেটিক ট্র্যাকে। উদ্বোদিনে দিনের সেরা আকর্ষণ ছিল ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। এতে পাওয়া গেছে পুরনো রাজা-রানী ইসমাইল হোসেন এবং শিরিন আক্তারকেই। দুজনেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্প্রিন্টার।
২৫ বছর বয়সী শিরিনের এবারের টাইমিং ছিল ১১.৮০ সেকেন্ড। এ নিয়ে জাতীয় ও সামার এ্যাথলেটিক্স মিলে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এ নিয়ে ১১ বার দ্রুততম মানবী হলেন তিনি। তবে এই ইভেন্টে সবচেয়ে বেশিবার জেতার রেকর্ডটি নিজের করে নেয়ার ব্যাপারে এখনও বেশ পিছিয়ে সাতক্ষীরার মেয়ে শিরিন। সামার ও ন্যাশনাল মিলিয়ে এই রেকর্ডটি নাজমুন নাহার বিউটির, ১৭ বার (ন্যাশনালে ৯ বার, সামারে ৮ বার)। তবে বিউটির টানা ৯ বার বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড (২০০৫-২০১৩) অনেক আগেই ভেঙ্গেছেন শিরিন। ন্যাশনাল ও সামার মিলে তৃতীয় সর্বাধিক ১০ বার জিতেছেন ফিরোজা বেগম।
শুক্রবার স্বর্ণজয়ের পর যখন শিরিনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, ‘এটি বিউটি আপুর রেকর্ড না। আমি নিজেই নিজের রেকর্ড বারবার ভেঙ্গেছি। সুফিয়া ম্যামের ছিল টানা সাতবার, লাভলী আপার ছিল টানা সাত বার। সেটিকে টপকে আমি ১১তে উন্নীত করেছি। কিভাবে তিনি ১৭ বার দ্রুততম হয়েছিলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তবে আমার ইচ্ছা আছে সুস্থ ও ফিট থাকলে আমার টানা রেকর্ডটি আরও সমৃদ্ধ করার।’
টাইমিং নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট? শিরিনের ভাষ্য, ‘আমার কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফি যদি খুশি হন, তাহলে আমিও খুশি। তবে তিনি নিশ্চয়ই আরও ভালো টাইমিং আশা করেছিলেন। আমি মোটামুটি খুশি। সামনে বাংলাদেশ গেমস আছে। ওটাতে ইনশাল্লাহ আরও ভালো টাইমিং করতে চাই।’ শিরিনের টানা সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় আর্মি এবং নেভিতে ভালো অনুশীলন হয়েছে। আমি নিজে অবশ্য অনুশীলন করেছি সাভারের বিকেএসপিতে। আমার সাফল্যের পেছনে নেভির অবদান ব্যাপক।’
১১ বার দ্রুততম মানবী হওয়ার পরও টাইমিংয়ের তেমন উন্নতি হয়নি শিরিনের। এ নিয়ে কোন আক্ষেপ আছে? ‘১০০ মিটারে আমার ইলেকট্রনিক্স টাইমিং ১১.৯৯ সেকেন্ড। এটা বাংলাদেশেরও রেকর্ড (এসএ গেমস, ২০১৬)। আমার ইচ্ছা-এই টাইমিংকে অতিক্রম করা। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্রুততম মানবী হতে চাই। এজন্য আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।’
করোনাকালীন প্রস্তুতি বা অনুশীলন করাটা কতটা কষ্টের ছিল শিরিনের? বিকেএসপিতে অনুশীলনের সময় আমাকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করেছেন কোচ কাফি স্যার। আমাকে সবসময় সঙ্গ দিয়েছেন কাফি স্যারের স্ত্রী লামিয়া ম্যাম, স্যারের দুই বাচ্চা আশফাক ও তাশফিয়া। মাঠের পুরোটাই ঘাসে ভর্তি ছিল। ঘাসে অনেক উচুঁ হয়ে গিয়েছিল। মাঝখানে একাই ট্রেনিং করেছি কিছুদিন। বাড়িতে থেকেও ট্রেনিং করতে পারতাম। পরিবারকে সময় দিতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এই করোনার সময়েই নিজেকে তৈরি করার শ্রেষ্ঠ সময়। পুরো লকডাউনটাই বিকেএসপিতে কাটিয়েছি।’
১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১০.৫৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম মানব হয়েছেন নৌবাহিনীর ইসমাইল হোসেন। বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানায়। বয়স ২৮। জয়ের পর তিনি বলেন, ‘করোনাকালে প্র্যাকটিস করায় অনেক বাধা ছিল। একটু সন্তুষ্ট যে দ্রুততম মানবের খেতাবটা ধরে রাখতে পেরেছি। টাইমিংটা মনপুত হয়নি। আশা করি বাংলাদেশ গেমসে সময় কমাতে পারবো।’
এ নিয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে টানা তৃতীয়বার সেরা হলেন ইসমাইল। সামারে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
সাফে স্বর্ণজয় প্রসঙ্গে ইসমাইল বলেন, ‘সাফে স্বর্ণ জেতা সম্ভব। সাফে যারা জিতেছিলেন, তারা আমাদের খুব বেশি ভাল না। পয়েন্ট ২০ মাইক্রো সেন্ডেনের ব্যবধান ছিল। ওরা বাইরের দেশে দীর্ঘদিন অনুশীলন করেছি। আমাদের যদি বাইরের দেশে দীর্ঘদিন অনুশীলন করানো হয়, তাহলে আমরাও পারবো।’
এবারের টাইমিং ভাল না হওয়ার জন্য এ্যাথলেটিক টার্ফের দোষ দেন ইসমাইল, ‘রানিংয়ের সময় পুশ করলে রিটার্ন দিচ্ছে না। যে কারণে শক্তিটা চলে যাচ্ছে।’