রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথের মাঝনদীতে চলন্ত অবস্থায় ওটি সাংহাই-৪ নামের তেলবাহী একটি ট্যাংকার জাহাজের ধাক্কায় অল্পতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে এমভি ফ্লাইং বার্ড-২ নামের এক লঞ্চের শিশু-নারীসহ দুই শতাধিক যাত্রী। সংশ্লিষ্ট জাহাজ ও লঞ্চটি জব্দ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ঘটনাটি ঘটেছে আজ শনিবার দুপুরে।
জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। প্রতিদিন সেখানে হাজার হাজার যাত্রী লঞ্চপারাপার হয়। সেখানে চলাচলকারী অধিকাংশ লঞ্চ অনেক পুরনো। প্রায় অকেজো হয়েপড়া অনেক লঞ্চের উপরে চকচকে বাহারি রঙের প্রলেপ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনসহ ভিতরের অনেক কিছইু জোড়াতালি দেওয়া। সেখানে প্রশিক্ষিত কোনো মাস্টার (চালক) না নিয়ে অনেক লঞ্চমালিক সামান্য বেতনে অনভিজ্ঞ ‘হেলপার’ দিয়ে তাদের লঞ্চগুলো চালাচ্ছেন। প্রতিটি লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার বাকেট, বালুভরা বাক্স, পাম্প মেশিন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ বয়া, ফাস্টএইডসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চে তা নেই। নৌদুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় প্রায়ই সেখানে ছোট-বড় নৌদুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
শনিবার দুপুর ১২টায় এমভি ফ্লাইং বার্ড-২ নামের একটি লঞ্চ পাটুরিয়া ঘাট থেকে দুই শতাধিক যাত্রী বোঝাই করে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে মাঝনদীতে পৌঁছায়। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পাবনার নটাখোলাগামী তেলবাহী একটি ট্যাংকার জাহাজের সঙ্গে হঠাৎ ধাক্কা লাগে। প্রচণ্ড ঝাকুনিতে যাত্রীবোঝাই লঞ্চটি নদীতে দুলতে থাকে। এ অবস্থায় ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে ১০-১২ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাপিয়ে পড়েন সাঁতরাতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে কেরামত আলী নামের একটি রো রো (বড়) ফেরি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তখন ফেরির লোকজন নদী থেকে ওই যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করেন।
এমভি ফ্লাইং বার্ড-২ লঞ্চের মাস্টার (চালক) মো. শহিদ শিকদার বলেন, আমার লঞ্চটি মাঝনদী অতিক্রম করার সময় ওটি সাংহাই-৪ নামের তেলের ট্যাংকার জাহাজটি অপর একটি জাহাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল। নিয়ন্ত্রণ করার আগেই সাংহাই জাহাজটি এসে আমার লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়ায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ওটি সাংহাই-৪ ট্যাংকার জাহাজের মাস্টার (চালক) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যাত্রীবোঝাই ওই লঞ্চটি দ্রুত গতিতে আসছিল। অবস্থা বুঝে দুর্ঘটনা এড়াতে সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার জাহাজের ইঞ্জন বন্ধ করে দেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহারা লঞ্চটির সঙ্গে আমার জাহাজে ধাক্কা লাগে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক পরিদর্শক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এমভি ফ্লাইং বার্ড-২ নামের লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ১৬৮ জন। ঘটনার দিন শনিবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ১৪৫ জন যাত্রী নিয়ে ওই লঞ্চটি পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেখানে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কোনো যাত্রী ছিল না। তবে, লঞ্চে থাকা শিশু-নারীসহ যাত্রীরা অল্পতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বলে তিনি জানান।