বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড হয়ে গেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল শনিবারের এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মী মিলে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কমপক্ষে ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এ ঘটনায় গত রাত সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগ ও রমনা থানায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছিল।
সমাবেশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে দুপুর ১২টায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে শুরু করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর পাঁচ মিনিটের মাথায় সমাবেশের শেষ পর্যায়ে কদম ফোয়ারার দিক থেকে পুলিশ একযোগে সমাবেশের দিকে অগ্রসর হয়। পুলিশ ফুটপাতে প্রধান অতিথির সামনে এসে বক্তব্য বন্ধ করতে বলে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন নেতাকর্মীর বাগবিতণ্ডা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমানউল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, নাজিমউদ্দিন আলমসহ বিএনপির নেতারা প্রেস ক্লাবের ভেতরে আশ্রয় নেন। একদল নেতাকর্মী প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পুলিশের লাঠিপেটায় এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষের পর দুপুর পৌনে ১টার দিকে সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ড. মোশাররফ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জিয়াউর রহমানই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কোনো এখতিয়ার নেই এই খেতাব বাতিলের। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ফোর্স ‘জেড’ ফোর্সের কমান্ডার। তাঁর অর্জিত খেতাব বাতিলের অধিকার কারো নেই। আমি আহ্বান জানাব, আগামী দিনে এই সরকার পতনের আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। আজ আমি সেই আন্দোলনের ডাক দিচ্ছি।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশটা ভাষণে স্বাধীন হয়নি; স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধের অপর নাম জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ মানে জিয়া; গণতন্ত্র মানে জিয়া; দেশপ্রেম, সততা, আধুনিক-স্বনির্ভর বাংলাদেশ মানে জিয়া। জিয়ার খেতাব নিয়ে আমরা ব্যবসা করি না, গর্ব বোধ করি, উৎসাহিত হই।’
রাজধানীতে গতকালের এই বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় সমবেত হন। সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলকামান ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকালে সমাবেশ শুরুর পর পুলিশ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে নেতাকর্মীর উপস্থিতি বাড়তে থাকলে পুলিশ এক পাশে সরে যায় এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের আবদুল আলীম নকীর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, সমাবেশকারীদের হামলায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) শেখ মো. শামীম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মধ্যে অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
শাহবাগ থানার ওসি মামুন উর রশীদ বলেন, ‘সমাবেশে জড়ো হওয়া লোকজন প্রথমে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হামলায় আমিসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১৮ জনকে থানায় আনা হয়েছে।’
অন্যদিকে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন আহত কয়েকজন কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করেছে। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পুলিশের লাঠিপেটা থেকে কর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে ইশরাক নিজেও আহত হন বলে জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা।
আহত নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালে নেতারা : পুলিশের লাঠিপেটায় আহত নেতাকর্মীদের দেখতে গতকাল দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনি সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বাবু, ঢাকা কলেজের যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ, মহানগর পূর্বের সহসাধারণ সম্পাদক আলামিন খান, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান, ঢাকা জেলার সহসভাপতি তমিজ উদ্দিন, হাবীবুল্লাহ্ বাহার কলেজ ছাত্রদল নেতা রাহাত হোসেন, উজিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ ব্যাপারী, মহানগর উত্তরের কামরুজ্জামান, টঙ্গী থানার মনিরুজ্জামানসহ আহত অন্য চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইশরাক হোসেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহসভাপতি মামুন খান, আশরাফুল ইসলাম লিংকন, ওমর ফারুক কাওসার, পাভেল সিকদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসলাম প্রমুখ।