কোনো ব্যক্তির প্রকৃত ইসলাম পালনের মধ্যেই রয়েছে আত্মিক ও বাহ্যিক সৌন্দর্য। মানুষের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম হলো দৈহিক সৌন্দর্য। দাড়ি রাখা ইবাদত, তেমনি ব্যক্তির সম্মান, সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধির প্রতীক। দাড়ি মুণ্ডন করা কিংবা কর্তন (যখন এক মুঠ থেকে কম) করা হারাম এবং কবিরা গুনাহ। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘১০ কাজ প্রকৃতির অন্তর্গত, এর মধ্যে প্রথম দুটি হচ্ছে গোঁফ খাটো করা, দাড়ি বড় করা। (মুসলিম : ২/৫১১)
গোঁফ কর্তন করা এবং দাড়ি লম্বা করা মানুষের সুস্থ প্রকৃতির চাহিদা। আর গোঁফ লম্বা করা এবং দাড়ি মুণ্ডন করা প্রকৃতির বিপরীত। যে ব্যক্তি এমন কর্ম করে সে আল্লাহ তাআলার প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে দেয়। কোরআন মাজিদে আছে, অভিশপ্ত শয়তান আল্লাহ তাআলার সমীপে বলেছিল যে আমি আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করব এবং তাদের হুকুম করব যে তারা যাতে আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে দেয়। তাফসিরবিদদের মতে, দাড়ি মুণ্ডন করা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে পরিবর্তন করার অন্তর্ভুক্ত।
দাড়ি মুসলিম জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন-
ক. দাড়ি সব নবীর সুন্নত : ইবনে আব্বাস (রা.) একটি সহিহ সনদে ব্যাখ্যা করেন, আল্লাহ তাআলা যেসব ‘কালিমাত’ দ্বারা ইবরাহিম আ. এর পরীক্ষা নিয়েছিলেন, সেগুলো ছিল ফিতরার স্বাভাবিক গুণাবলি। দাড়ি ছিল সেগুলোর অন্যতম। আর ইবরাহিম (আ.) সব পরীক্ষায়ই সফলতা লাভ করেছেন।
কোরআন মাজিদের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে নবী হারুন (আ.)-এর দাড়ি ছিল দীর্ঘ। পবিত্র কোরআনে মুসা ও হারুন (আ.)-এর কথোপকথনের উল্লেখ এভাবে এসেছে, ‘সে (হারুন) বলল, হে আমার জননী তনয়, আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরো না।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৯৪)
খ. পৌরুষত্বের লক্ষণ : আল্লাহ নারী-পুরুষকে সুন্দরতম আকৃতি দান করেছেন এবং উভয়ের মধ্যে সৌন্দর্যের উপকরণ স্থাপন করেছেন। পুরুষের দাড়ি যেমন পুরুষত্বের পরিচয় বহন করে, তেমনি তা মুখের সৌন্দর্য বর্ধন করে।
গ. সৌন্দর্য ও সম্মানের প্রতীক : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি…।’ (ইসরা, হাদিস : ৭০)
কতিপয় তাফসিরকার বলেন, সম্মানিত করার একটি রূপ হলো আদম সন্তানদের সর্বোত্তম ও সুন্দরতম গঠনে অবয়ব দান করা হয়েছে। পুরুষের দাড়ি এবং নারীদের কেশগুচ্ছ হচ্ছে সম্মানিত করার দৃষ্টান্ত।
ইসলামী আইনবিদদের মতে দাড়ি কামানোর বিধান
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, দাড়ি মুণ্ডন, উঠানো বা কর্তন করা কোনোটাই জায়েজ নয়। শায়খ বিন বাজ বলেন, দাড়িকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেওয়া ফরজ। শায়খ ইবনে উসাইমিন বলেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব, তা মুণ্ডন করা হারাম বা কবিরা গুনাহ। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) সেই লোকের থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করতেন না যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে।
কাজেই ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। ধর্মীয় বিধান পালনের পাশাপাশি এটি মুসলিম সংস্কৃতির অন্যতম ভূষণও বটে।
লেখক : এমফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক।
email- [email protected]