রাত পেরোলেই দীর্ঘ ৩৫ দিনের অপেক্ষার অবসান। পশ্চিমবঙ্গের ৮ দফা নির্বাচন, ফল প্রকাশ হবে ২ মে, রবিবার।
করোনা আবহে রাজ্যে মৃত্যুমিছিল চলছে। হাসপাতালের রোগীদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে নির্বাচনের ফলাফল কী হতে পারে। ফল প্রকাশের আগের দিন কে আসছে আর কে যাচ্ছে তা নিয়ে নেতা থেকে শুরু করে কর্মীদের মধ্যে তুমুল আলোচনা চলছে। মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন- পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন? পাড়ার চায়ের দোকান থেকে রাজনৈতিক নেতার ড্রইংরুমে এখন এই আলোচনার ঝড় বইছে।
ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনের শেষের দিন, অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল এক্সিট পোলের যে ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষিত হয়েছে, তার বেশিটা জুড়েই তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার কথা বলা হয়েছে। এতে খুব স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল খুশি আর বিজেপির কিছুটা মুখ ভার। তবে যেহেতু এবার নির্বাচনে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, তাই কোনো দলের নেতারাই খুব একটা স্বস্তিতে নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফল প্রকাশের আগেই প্রার্থী ও দলের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করে বলে দিয়েছেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে তৃণমূল রাজ্যে আবার ক্ষমতায় আসছে।’ তৃণমূলের কর্মীদের গণনা কেন্দ্রে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বিজেপির নেতারাও দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করছেন। এক্সিট পোলের ভবিষ্যদ্বাণী মানতে চান না বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘বিজেপি-ই বাংলায় ক্ষমতায় আসছে। আমরা এক্সিট পোল নয়, আসল ফলে বিশ্বাস করি।’
বিজেপির তরফ থেকে গণনার আগে আজ শনিবার নতুন স্লোগান জারি করে বলা হয়েছে- পাড়ায় পাড়ায় বলে দিন, দিদি আর মাত্র একটা দিন।
বিজেপি আর তৃণমূল দুই দলের জন্যই এই নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূলকে যদি হারের সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে এই দলের অস্তিত্বের সংকট তৈরি হবে । কারণ অনেকেই মনে করেন তাহলে মমতার পক্ষে দলের বিজয়ী বিধায়কদেরও ধরে রাখতে পারা মুশকিল হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে বিজেপির কাছে এই নির্বাচন সম্মানের লড়াই। নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে আসছেন, “এবার ২০০ আসন নিয়ে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে চলেছে।” প্রধানমন্ত্রী সব সভাতেই বলেছেন, “২ মে দিদি যাচ্ছেন, বিজেপি আসছে।”
আসলে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে পরিমাণ সভা রাজ্যে করেছেন, এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী সেটা করেননি। বিজেপির হয়ে রাজ্যে নির্বাচনী সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত, রাজনাথ সিং, যোগী আদিত্য নাথ, জে পি নাড্ডাসহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা।
তবে মমতা ও সমানে সমানে লড়াই করেছেন এবং পায়ে আঘাত নিয়েও মোদি শাহর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে সহিংসতায় ইতিহাস আছে ,তাই অনেক চিন্তিত ফল কী হতে পারে তা নিয়ে।
‘হাতির লড়াই গণতন্ত্রের পক্ষে খুব ভালো নির্বাচনের ফল যা-ই হোক আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের রায় মাথা পেতে নেবে এবং শান্তি বজায় রাখবেন, করোনার আবহে যেন কোনো সহিংসতা না হয়’ বলেছেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী।