মাসুদ রানাঃ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ আহ্বায়ক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক সদস্য সচিব ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহমুদুল আলম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

কমিটিকে ১৬ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব শামিমা বেগমের স্বাক্ষরে ওই তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠি ইস্যু করা হয়। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম তদন্তপূর্বক দায়ীদের চিহ্নিত করে সুপারিশমূলক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এতে আরো বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না।

তাই এর ব্যত্যয় ঘটলে আত্মসাতের সে অর্থ পুনরুদ্ধারে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করার সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি এরই মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। গতকাল ভার্চুয়ালি তদন্ত কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তদন্ত কার্যক্রমের পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি গঠনের চিঠি ১ আগস্ট ইস্যু হলেও আমি সেটি হাতে পেয়েছি দুইদিন আগে।

আমরা এরই মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে তদন্ত কার্যক্রমে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তদন্ত কার্যক্রমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টির কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করব। পরবর্তী সময়ে তদন্ত কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাত্কারও গ্রহণ করা হবে। এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়মের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে (বিওটি) ঘিরে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো অর্থ ব্যয় করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির টাকায় একেকজন ট্রাস্টি প্রায় ৩ কোটি টাকার ল্যান্ড রোভারের বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ি কিনে ব্যবহার করছেন। বিওটিসহ নিজেদের তৈরি করা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কমিটির সভা ডেকে বড় অংকের সিটিং অ্যালাউন্স নেন ট্রাস্টিরা। সভাভেদে সিটিং অ্যালাউন্স বাবদ একেকজন সদস্য নিচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে সেটি ১ লাখ পর্যন্ত ছিল। নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও কেনাকাটা কিংবা সেবার নামে মোটা অংকের অর্থ বের করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এনএসইউর কয়েকজন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে।

এমনকি স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনদের নামমাত্র নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন-ভাতা বাবদও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অনেক ট্রাস্টি। এছাড়া দরিদ্র কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে। এর আগেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম তদন্তে ইউজিসির মাধ্যমেও একাধিক তদন্ত পরিচালনা করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও সেসব তদন্তে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ মিললেও তা বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ইউজিসির সাবেক একজন চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, নর্থ সাউথের অনিয়ম প্রমাণের জন্য তো তদন্ত কমিটির প্রয়োজন হয় না।

সেখানকার বিওটি সদস্যরা তো গণমাধ্যমের কাছেই গাড়ি কেনার কথা স্বীকার করে সেটি কোনো দোষের নয় বলে দাবি করেছেন। বিওটির রেজল্যুশনের ভিত্তিতে বৈধভাবে সিটিং অ্যালাউন্স নেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া ইউজিসির আগেকার তদন্তেও বিভিন্ন অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছে। যদিও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, অদৃশ্য কারণে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখিনি মন্ত্রণালয়কে। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে নর্থ সাউথের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গায়েব হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।