রাত তখন প্রায় গভীর। এরপরও নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী জড়ো হতে থাকে ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ারে। কেউ কেউ আসেন অন্য স্টেট থেকেও। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। স্থানীয় সময় ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে টাইমস স্কয়ারের আইকনিক বিলবোর্ডটিতে ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর মুখ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেমের ছবি দেখলো বিশ্বের মানুষ। সেখানে উপস্থিত হয়ে কয়েক শ প্রবাসী শোক আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করলো বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতাকে। আর জাতীয় শোক দিবসে ব্যতিক্রমী এই আয়োজনটি করে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এনওয়াই ড্রিমস প্রোডাকশন।
দিনটি শোকের, সেই আবহ ছিল পুরোটাই। প্রিয় নেতার ছবি চোখের সামনে দেখে অনেকেই আবেগে ভেসেছেন। শ্লোগানে মুখরিত করেছেন গোটা প্রাঙ্গণ। রাত ১২ টার পর থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের বিশেষ এই প্রদর্শনী। ২৪ ঘন্টায় প্রতি দুই মিনিট পর পর ১৫ সেকেণ্ড করে যা দেখানো হয়।
অর এর মোট ব্যপ্তি তিনঘন্টা। ওয়ান টাইমস স্কয়ারের বিলবোর্টটির উপর থেকেই ইংরেজি বর্ষবরণের বিখ্যাত বলড্রপের আয়োজন করা হয়। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সেই বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখা যাবে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই প্রবাসীদের মধ্যে ব্যপক উৎসাহ তৈরি হয়।
এই আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন নানা বয়সের অসংখ্য মানুষ। এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত থেকে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা থেকে ভিডিও বার্তা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনায় যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ অনেকে। এসময় আয়োজনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এনওয়াই ড্রিমস প্রোডাকশনের সিইও ফাহিম ফিরোজ।
ভিডিওবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবনটা বিসর্জন দিয়েছেন। তিনি আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে আমাদেরকে একটা স্বপ্ন দিয়েছেন।
সেই স্বপ্ন হচ্ছে, সোনার বাংলার স্বপ্ন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে সেই সোনার বাংলা অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি”। সকল প্রবাসীকে বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নেয়ার আহবান জানান তিনি। টাইমস স্কয়ারের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার এমন উদ্যোগকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম বলেন, “শোকের মাসে আমরা কখনোই কোন আনন্দ আয়োজন করি না। তবে আজকের অনুষ্ঠানে এসে আমার গর্বের অনুভূতি হচ্ছে। কারণ টাইমস স্কয়ারের বিখ্যাত বিলবোর্ডটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম যেমন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছে, তেমনিভাবে বিশ্ববাসীও দেখছে।’
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য পর্যটক এই টাইমস স্কয়ারে আসেন। এই গভীর রাতেও অসংখ্য মানুষ আছেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটা তাদের মাঝে গভীরভাবে ছড়িয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তারা জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও জানতে পারবে।’
নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, ‘এই মাহেন্দ্রক্ষণটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। জাতির পিতাকে টাইমস স্কয়ারের বিলবোর্ডে এমন উপস্থাপন বলছে, তিনি বিশ্ববন্ধুও। আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে প্রবাসীরা এভাবেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস বিশ্বের সামনে যেনো তুলে ধরেন’।
উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সিইও ফাহিম ফিরোজ বলেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতির পিতাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবো। সেই উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ায় মনের মধ্যে গভীর ভালোলাগা তৈরি হয়েছে।” বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি এমন আয়োজন করেছেন বলে জানান।
প্রবাসীরা বলছেন, বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার এই আয়োজনের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারি। এসময় টাইমস স্কয়ারে উপস্থিত অন্যান্য দেশের পর্যটকদেরও থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।তাদের মধ্যে অনেকে এসে আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। অনেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও জানতে উৎসাহিত হয়েছেন।
এদিকে সেখানে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।