ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ব্যতীত সদর উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী। তিনি নিক্সন চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও পর পর দুইবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান নিক্সন চৌধুরী বর্তমানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন— উচ্চকণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে এমন আশার কথাই শোনালেন তিনি।

উচ্চকণ্ঠ : টানা দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। একবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। আগামীবার পাবেন বলে মনে হয়?

নিক্সন চৌধুরী : যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন যে আমি যুবলীগের সংগঠন গোছাতে পারব, সে জন্যই তিনি আমাকে দায়িত্ব্ব দিয়েছেন। আমার এলাকার ৯৫ ভাগ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ সবাই এখন আমার সঙ্গে। এখন আমার এলাকা থেকে সবাই চাচ্ছেন যে আমি নৌকার প্রার্থী হই। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নেতাকর্মীদের চাওয়াকে গুরুত্ব দেন, সেহেতু আমার বিশ্বাস, আগামীবার আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আমি আশা করি, তৃতীয়বার আর আমাকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে হবে না। আর আমি চাই না যে কাজী জাফর উল্যাহ (আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) সাহেব পরাজয়ের হ্যাটট্রিক করুক। এটা দলের জন্য বদনাম হয়ে যাবে।

উচ্চকণ্ঠ : ২০১৪ সালে প্রথমবার আপনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য হন। কেন মনে হলো যে দলীয় একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপনার ভোট করা দরকার?

নিক্সন চৌধুরী : আসলে কিছুদিন আগে, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার হওয়ার আগে আমার কিন্তু কোনো দলীয় পদ ছিল না। ফলে আমি দলের বিরুদ্ধে গেছি, এটা বলা ঠিক নয়। হয়তো আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, সে জন্য অনেকে এটা ভেবে থাকতে পারেন। কিন্তু গত দুই নির্বাচনের কোনোটাতেই আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনি নাই।

দল থেকে মনোনয়ন চাইও নাই। কারণ আমার একটা ধারণা ছিল, কাজী জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের যে রাজনীতি পরিচালনা করেন সেখানে পরিবারের থেকে দলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে আমি দলের মনোনয়ন চাই নাই।

আমার জন্মস্থান শিবচর। শিবচর আর ভাঙ্গা কিন্তু পাশাপাশি। আমার বাড়ি থেকে দুই শ গজ পরেই ভাঙ্গা উপজেলা। ওইখানে যারা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ করেছে তাদের একটা বড় অংশ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জাফর উল্যাহ সাহেবের কাছে বঞ্চিত হয়েছে। অন্য দল থেকে আসা সুবিধাবাদী লোক এবং নিজের পরিবারের ভেতর থেকে যখন তিনি নেতৃত্ব নির্বাচন শুরু করলেন, দলের সঠিক লোককে যখন মূল্যায়ন করলেন না তখন একটা ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু হলো। দুর্দিনে যাঁরা আওয়ামী লীগের জন্য জেল-জুলুম খেটেছেন তাঁদের যখন বঞ্চিত করলেন তখন ক্ষোভ তৈরি হবে, এটা স্বাভাবিক। দ্বিতীয় বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের নেতাকর্মীরা এলাকার যে উন্নয়ন আশা করেছিল তা কিন্তু জাফর উল্যাহ সাহেবের কাছ থেকে পাওয়া যায় নাই।

২০০৯ সালেও যখন উনার স্ত্রী সংসদ সদস্য ও উনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডিয়াম মেম্বার তখনো এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। উনার নিজের বাড়িতে যেতে হলেও কোমর ভেঙে যাবে—এমন রাস্তা ছিল। তৃতীয় বিষয় হলো, দলের নেতা হওয়া আর ভোট কিন্তু আলাদা বিষয়। উনার পরিবারের সঙ্গে এলাকার সাধারণ মানুষের কখনোই আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে উনার পরিবারের সদস্যরা এলাকার মানুষদের ওপর জুলুম করেছেন। এর ফলে ২০১৪ সালে কিন্তু সেখানকার জনগণ ভোটের মধ্যে দিয়ে তাঁকে জবাব দিয়েছে। এই সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাপেই কিন্তু আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। প্রথমবার আমাকে জনগণ এমপি বানিয়েছে কাজী জাফর উল্যাহর বিরোধিতা করতে গিয়ে। লোকজন কিন্তু নৌকার বিরুদ্ধে আমাকে ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে জাফর উল্যাহর বিরুদ্ধে।

উচ্চকণ্ঠ : আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিলেন সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন, তখন আওয়ামী লীগ বা আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ ছিল কি?

নিক্সন চৌধুরী : হ্যাঁ, আমার ওপর অবশ্যই চাপ ছিল। পারিবারিক চাপ অবশ্যই ছিল। কিন্তু যখন আমি মাঠে নেমেছি, জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পেরেছি এবং তাদের কষ্ট ও ক্ষোভ বুঝতে পেরেছি তখন আর আমি চাপের কাছে মাথা নত করিনি।

উচ্চকণ্ঠ : বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকায়, কিন্তু ফরিদপুরের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে আপনার বিশেষ সখ্য দেখা যায়। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?

নিক্সন চৌধুরী : আমার বাবা তিনবার এমপি ছিলেন। আমার ভাই ছয়বারের এমপি। আমার জন্মের আগে থেকেই আমার বাবা এমপি ছিলেন। ফলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমাদের বরাবরই একটা বিশেষ সম্পর্ক ছিল। আমরা কোনো ঈদই ঢাকায় করতাম না। আব্বা জীবিত থাকতে সব সময় গ্রামেই ঈদ করতাম।

উচ্চকণ্ঠ : আপনার কথাবার্তা, চলাফেরায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। গ্রামের মানুষের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথা বলেন। এগুলো কি আগে থেকেই আপনার মধ্যে ছিল, নাকি রাজনীতিতে আসার পরে আয়ত্ত করেছেন?

নিক্সন চৌধুরী : আগে থেকেই ছিল। আমি বরাবরই এ রকম। যেমন ধরেন, আমি প্রবাসীদের নিয়ে কথা বলি। বিদেশে যাতায়াতের কারণে প্রবাসীদের সমস্যাগুলো কাছে থেকে দেখতাম। ফলে তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারি বলেই তাদের সমস্য নিয়ে কথা বলি। কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, যাঁরা সত্য কথা বলতে সাহস পান না। আমি কিন্তু এ রকম না। যেটাকে সত্য মনে করি বলে ফেলি।

আমার বিশ্বাস, সরকারপ্রধানও বুঝতে পারেন, আমি কার পক্ষে বলছি, কার ভালোর জন্য বলছি। এর মানে এই না যে আমি তাঁর থেকে দূরে সরে যাব।