সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লাসহ ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলাগুলোতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত হয়ে আসছে। গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ, রাত আনুমানিক ০১.৩০ হতে ০৩:৪৫ পর্যন্ত ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট বাজারস্থ ১৯টি স্বর্ণের দোকান থেকে অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০ জন সশস্ত্র ডাকাত স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং নগদ টাকাসহ সর্বমোট ১,০২,৩২,০০০/= ডাকাতি করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় আশুলিয়া থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-০৬/০৯/২০২১, ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু হয়।
উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘঠনের ঘটনাটি সমগ্র দেশ জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। মামলাটি সিআইডি অধিগ্রহন করে তদন্ত শুরু করে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় এলআইসির একাধিক চৌকস টিম উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইং ১৫/০৯/২০২১ তারিখ রাতে ১। শাহানা আক্তার (২৪) স্বামী- মোঃ আনোয়ার দেওয়ান, পিতা- সৈয়দ আলী, সাং- পূর্বগ্রাম, থানা- রুপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জকে মধ্য বাড্ডার গুলশান লিংক রোডের একটি ভাড়া বাসা হতে ডাকাতিতে লুন্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির নগদ ২,৪৪,৮৪০/= টাকা ও আনুমানিক ৩/৪ ভরি স্বর্নসহ গ্রেফতার করে ইং ১৬/০৯/২০২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করিলে সে কাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছা প্রদত্ত দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করে। পরবর্তীতে আল মিরাজ মিন্টু (৩৮) ও কামাল খান (৩৯)দের বিজ্ঞ আদালত হতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুনরায় বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করিলে তারা উভয়ই ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট আছেন মর্মে বিজ্ঞ আদালতে কাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছা প্রদত্ত দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করে।
তদন্তের ধারাবাহিকতায় এলআইসি’র একাধিক চৌকস টিম দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান পরিচালনা করে আশুলিয়ার নয়ারহাটে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ১। আনোয়ার হাওলাদার (৩৯) পিতা-মোহাম্মদ দেওয়ান, সাং- কুন্ডের চর, থানা – জাজিরা, জেলা- শরিয়তপুর, ২। মোঃ দেলোয়ার হোসেন খলিফা( ৩৬), পিতা- মৃত সিরাজ খলিফা, সাং- দাইমুদ্দিন খলিফার কান্দি, থানা- জাজিরা, জেলা- শরিয়তপুর, ৩। আঃ রহিম (৫৫),পিতা- শামসু ডাকাত, সাং- ঝাউকা ঝাউকান্দা নিতাইর টেক, পোঃ কালা পাহাড়িয়া, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, ৪। আল মিরাজ@মিন্টু (৩৮) পিতা- মৃত হারুন গাজী, সাং- ব্রাহ্মণকাঠি, থানা- বানারীপাড়া, জেলা- বরিশাল, ৫। কামাল খা (৩৯) পিতা- মোতালেব খাঁ, সাং- বলাইর চর, থানা- সদর, জেলা- মাদারীপুর, ৬। মোঃ সাগর (৪০) পিতা- মোহাম্মদ দেওয়ান, সাং- কুন্ডের চর, থানা- জাজিরা, জেলা- শরিয়তপুর এবং ডাকাতির লুন্ঠিত মালামাল ক্রয়ের সাথে জড়িত থাকায় ১। সবুজ রায় (৩২) পিতা- নকুল চন্দ্র রায়, সাং- কারপা (রায়বাড়ী), থানা- উজিরপুর, জেলা- বরিশাল, ২। আঃ রহিম (৩১) পিতা- মৃত আঃ মালেক, সাং- বন্দ কাউলজানী, থানা- মির্জাপুর, জেলা- টাঙ্গাইলদেরকে সিআইডি’র হেফাজতে নেয়া হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে আসামী ১। শাহানা, ২। আনোয়ার, ৩। দেলোয়ার, ৪। সবুজ রায়, ৫। আঃ রহিম, ৬। আল মিরাজ@মিন্টু, ৭। কামাল খাঁ আশুলিয়ায় ডাকাতির ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ পূর্বক কাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক স্বেচ্ছা প্রদত্ত জবানবন্দী বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করে। ঢাকার নয়াবাজার এলাকার আঃ রহিমের ভাড়া করা বাসা হতে আশুলিয়ার ডাকাতির ঘটনার লুন্ঠিত ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয় যার আনুমানিক মূল্য ১৪,০০,০০০/= (চৌদ্দ লক্ষ) টাকা। উল্লেখ্য যে, ইং ০৭/০২/২০২১ তারিখ রাতের বেলায় ডিএমপি’র ধানমন্ডি থানাধীন রাপা প্লাজার ২য় তলায় অবস্থিত রাজলক্ষী জুয়েলার্সে তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে অনুমান ২০০ ভরি স্বর্ণ যার আনুমানিক মূল্য- ১,৪০,০০,০০০/= (এক কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা) চুরি করে নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানার মামলা নং- ৪/২২, তারিখ-০৭/০২/২০২১ ইং ধারা- ৪৫৭/৩৮০ পেনাল কোড রুজু হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আসামী- ১। সবুজ রায় (৩২) পিতা- নকুল চন্দ্র রায়, সাং- কারপা (রায়বাড়ী), থানা- উজিরপুর, জেলা- বরিশাল, ২। আঃ রহিম (৩১) পিতা- মৃত আঃ মালেক, সাং- বন্দ কাউলজানী, থানা- মির্জাপুর, জেলা- টাঙ্গাইলদ্বয় তাদের সঙ্গীয় অপরাপর ৫/৬ জন ডাকাতসহ ঘটনার তারিখ ও সময়ে রাপা প্লাজায় ডাকাতির কথা স্বীকার করলে তাদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার নয়াবাজার এলাকার সবুজ রায়ের ভাড়া করা বাসা হতে উক্ত ডাকাতির ঘটনার লুন্ঠিত ১২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয় যার আনুমানিক মূল্য ৮,৪০,০০০/= (আট লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা।
ডাকাতির লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার রাজধানীর তাঁতীবাজারে অবৈধভাবে বেচাকেনার সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে সিআইডি’র কাছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুন্ঠিত স্বর্ণের অলংকার গলিয়ে স্বর্ণের পাত বানিয়ে মূলতঃ তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। যা আসামী সবুজ রায় এবং আসামী আঃ রহিম কর্তৃক বিজ্ঞ আদালতে কাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক প্রদত্ত জবানবন্দীতে তাঁতীবাজারের খাঁজা কর্পোরেশন, রাজিয়া বুলিয়ান স্টোর, সুমন বুলিয়ান স্টোর এর নাম উঠে আসে। সম্প্রতি সিআইডি আশুলিয়া ও রাপা প্লাজায় ডাকাতি মামলার তদন্তে তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসার চক্র চিহ্নিত করে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারিসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট বাজারে দুর্ধর্ষ ডাকাতি মামলার তদন্তের সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর রাপা প্লাজায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি মামলার রহস্য দ্রæততম সময়ে উদঘাটন পূর্বক আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য এবং অভ্যাসগতভাবে লুন্ঠিত স্বর্ণ ক্রয়ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।
উক্ত ডাকাতি মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময় মিডিয়ার সামনে ব্রিফ করা হয়েছে।