বাংলাদেশের চাওয়াই পূরণ হয়েছে। নেপাল হেরে গেছে ভারতের কাছে। শেষ ম্যাচে নেপালকে হারাতে পারলেই তাই ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। সমীকরণটা এখন তাই বাংলাদেশের হাতেই। অন্য কোনো ম্যাচের ফলের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবে না।
কাল নেপালিরা রক্ষণাত্মক ফুটবলে ৮১ মিনিট পর্যন্ত আটকে রেখেছিল ভারতকে। কিন্তু সুনীল ছেত্রীকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখতে পারেনি তারা। ৮২ মিনিটে ছেত্রীর গোলেই আসরের প্রথম জয় নিয়ে ভারতও এখন ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে। শেষ ম্যাচে মালদ্বীপকে হারাতে পারলেই তারা যাবে ফাইনালে। মালদ্বীপ জিতলে মালদ্বীপ যাবে, ড্র হলেও। বাংলাদেশের সমীকরণ হারাতেই হবে নেপালকে, ড্র হলেও হবে না। দুই দিন বিশ্রামের পর কাল বিকেলেই প্রথম মাঠের অনুশীলন করেছেন জামালরা। দুই দলে ভাগ হয়ে ম্যাচ খেলেছেন প্রায় পুরোটা সময়। বিশ্রামের পর শরীরটাকে মাঠের সঙ্গে আবার মানিয়ে নিতে এর জন্য বিকল্প ছিল না। হালকা মেজাজেই খেলেছেন সবাই। ১০০ মিটারের দৌড় শুরুর আগে স্প্রিন্টাররা যেমন হাসি-কৌতুকে হালকা রাখার চেষ্টা করেন নিজেদের, অনেকটা তেমন।
ফাইনালে যেতে হলে শেষ ম্যাচে জিততেই হবে—ক্ষয়িষ্ণু ফুটবলে এই সমীকরণও তো সহজ নয়! বাংলাদেশ এখনো তো নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। জেমির অধীনে বড় দলগুলোর বিপক্ষে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মতো একটা চরিত্র দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু কাউকে গোল দিতে হলেই যেন দিশাহারা বাংলাদেশ। অস্কার ব্রুজোন সেই ছবিটা পাল্টে দেওয়ার ব্রত নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ তাঁর দর্শনে এখনো একটা শক্ত ভিত পেয়েছে বলা যাবে না। ব্রুজোন যে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, সেটি এখনো একই আছে। তবে আশার জায়গা তৈরি হয়েছে মানতে হবে।
চার আসর গ্রুপ পর্ব পেরোতে না পারা দলটি ফাইনাল থেকে এখন এক ম্যাচ দূরে, এটা বাড়তি অনুপ্রেরণাও তো তৈরি করে। ফিনল্যান্ডে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা তারিক কাজীও জানেন চাপ নেওয়ায় কতটা বিপদ হতে পারে, তাই সে প্রসঙ্গেই যেতে চান না তিনি, ‘এই সময়টা বরং উপভোগ্য করতে চাই আমরা। চাপ কোনো কাজে আসবে না। আমাদের সামনে সুযোগ, এটাকে বরং অনুপ্রেরণা নিয়ে ফাইনালে যেতে চাই আমরা, বাংলাদেশের মানুষকে গর্বিত করতে চাই।’
জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এটা তারিকের। মালদ্বীপের ফুটবল উন্মাদনার মধ্যে খেলাটা তিনি উপভোগ করছেন বলেও জানিয়েছেন, ‘এই অঞ্চলের ফুটবল দেখার নতুন অভিজ্ঞতা হলো আমার। সমর্থকরা এমন ফুটবল পাগল এখানে যে, খেলাটা সত্যি উপভোগ করছি। এখান থেকে ভালো কিছু নিয়ে ফিরব এই বিশ্বাস আছে।’ মূলত রাইট ব্যাক তপুর সঙ্গে সেন্টার ব্যাক পজিশনে জুটি গড়ার তাঁর আর বিকল্প যেন চোখে পড়ছে না। নেপালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচেও নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে নামছেন তিনি।
ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান এই টুর্নামেন্টে এখনো বদলি হিসেবে খেলছেন। তাঁর পায়ে যে গোল আছে, এটি দেখিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকবার। ঢাকায় গত সাফেও তাঁর গোল ছিল। নেপালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও বদলি নেমে জাল খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই মাহবুবুরের কাছে এই আসরে এত দিনে একটি গোল পাওনাই হয়ে গেছে বলা যায়। নেপালের বিপক্ষে শেষ সেই সুযোগ। মাহবুবুরকে অবশ্য তা মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই।
কাল এ প্রসঙ্গ উঠতেই যেমন বলছিলেন, ‘নেপালের হাফ চান্স পেলে সেটিই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। যে-ই পায়, জিততে হলে গোল করতে হবে আমাদের।’ আক্রমণাত্মক খেলে নেপালকে চাপে রাখার কথাও বলেছেন তিনি। ম্যাচের তিন দিন আগে মাঠের অনুশীলন শুরুর প্রথমেই এ নিয়ে ব্রুজোন শিষ্যদের প্রাথমিক ধারণাও দিয়েছেন, ‘নেপাল ম্যাচে আমাদের যেহেতু জিততেই হবে। কোচ হয়তো তাঁর জন্য খেলার পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন। সেরকমটাই অনুশীলনের শুরুতে বলে দিয়েছেন। আগামী দুই দিন এটা নিয়ে কাজ করবেন।’
ভারত ও মালদ্বীপের বিপক্ষেও আক্রমণ ও রক্ষণে ভারসাম্যপূর্ণ ৪-১-৪-১ ফরম্যাশনে খেলেছে বাংলাদেশ। নেপাল ম্যাচে সেটি পরিবর্তন করা মানে পুরোপুরি আক্রমণাত্মক হওয়ারই ইঙ্গিত। অর্থাৎ এদিন প্রতিপক্ষের অর্ধে আধিপত্য নিয়েই খেলতে চাইবে বাংলাদেশ। সেভাবেই নেপালকে চাপে ফেলা সম্ভব হবে। নিজেদের ওপর থেকে চাপটা সরিয়ে দেওয়ারও এর বিকল্প নেই।