নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়তার জন্য ১১ জন বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (SMC) করা হয়। এ কমিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি মনিটরিং, স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বিদ্যালয় নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজ পরিবীক্ষণ সহ বিদ্যালয়ের সকল প্রকার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্থানীয় অপরাজনীতীর বিকৃত কৌশল হিসেবে তুচ্ছ কারনে একশ্রেণির লোক ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন প্রাক্কালে আদালতের আশ্রয় নেয়। যার প্রেক্ষিতে আইনি জটিলতায় বছরের পর বছর আদালতে মামলা পরে থাকে, যাহাতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ও কমিটি গঠন বন্ধ থাকে। পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ১ নং ভিটাবাড়ীয়া ইউনিয়নে ১২ টি প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে ৫টি স্কুলেরই মামলা জটিলতায় ঝুলে আছে ম্যানেজিং কমিটি গঠন।

সম্প্রতি ১২ নং উত্তর শিয়ালকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গত ২৪ অক্টোবর ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া একজন অভিভাবক সদস্য প্রার্থীর আদালতে অভিযোগের কারনে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। যাহার মামলা নম্বর – ২০৯/২১। ১১ নং মধ্য শিয়ালকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ২০১৪ সালে মামলা হওয়ার কারনে স্থগিত রয়েছে, যাহার মামলা নম্বর – ১৪৭/১৪। ৮নং ভিটাবাড়ীয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও কিছুদিন পূর্বে মামলা হয়ে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে, যাহার মামলা নম্বর – ১৯১/২১। ২ নং উত্তর ভিটাবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও মামলা চলমান থাকায় ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। অনেকদিন যাবত মামলা চলমান থাকায় প্রধান শিক্ষক মামলা নম্বরটি ও ভুলে গেছে। ৪ নং মেদিরাবাদ (১) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও মামলা চলমান থাকায় ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এছাড়া ১ নং ভিটাবাড়ীয়ার ঐতিহ্যবাহী ভিটাবাড়ীয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও ২০১৭ সালে মামলা হয়ে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন স্থগিত রয়েছে, যাহার মামলা নম্বর – ৮৪/১৭।

শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে আদালতে মামলা হয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন বন্ধ হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসির উদ্দীন খলিফা বলেন, স্কুলের কিছু উন্নয়নমূলক কাজ আছে যেখানে প্রতি বছর সরকার কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ হয়, সে বরাদ্দের টাকা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা ব্যয় করতে হয়, সেক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি না থাকলে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় বাধা হয়, তাছাড়া ক্যাচমেন্ট এলাকার সুবিধা-অসুবিধা অনেক কিছুতে দেখা-শোনার বিষয় থাকে সেক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি না থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ম্যানেজিং কমিটি না থাকলে এটিও সাহেবকে সভাপতি করে এডহক কমিটি করা হয়, যাহার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ৬ মাস, যাহাতে শিক্ষার মান ১০০% বাধাগ্রস্থ হয়। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে যে বিষয় সহজেই মিমাংসা করা যায়, তাহা মিমাংসার পর্যায়ে না গিয়ে আদালতের আশ্রয় নেয়, যাহা আমার মতে ভাল কাজ না, মামলা হলে মহামান্য আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের কিছু করার থাকে না। চলমান মামলা থাকা স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের এক সপ্তাহ সময় বেধে দিয়েছি সর্বশেষ মামলার অবস্থা আমাকে জানাতে হবে। ভাণ্ডারিয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হিমাদ্রী শেখর দেবনাথ বলেন, আমাদের ম্যানুয়াল মোতাবেক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করতে ব্যাপক বাধাগ্রস্থ হয় যদি মামলা বা এডহক কমিটি থাকে। কোর্টের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব নয়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেন, একশ্রেণির লোক নিজেদের রাজনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের চেয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থ বেশি প্রাধান্য দেয়। যার ফলে শিক্ষার মান ও প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত ক্ষতি হয়। আর প্রতিটি স্কুলের মামলার গঠন একই প্রক্রিয়ার হওয়ায় একটি মামলাবাজ চক্রের কাজ বলে অনেকে মনে করেন এবং এ চক্রের হাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য উপরোস্ত কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।