মামলা

মোঃ আব্দুল হান্নান, ক্রাইম রিপোর্টার, সিলেট

দুই বছর আগে নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে জোর পূর্বক বাল্যবিবাহ দেওয়ার অভিযোগ এনে কাজী সহ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন চুনারুঘাট উপজেলার উসমানপুর গ্রামের মিলন চান নামের এক মা। গত ৯ নভেম্বর এ মামলা দায়ের করেন তিনি।

এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় উপজেলার উসমানপুর গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর পুত্র সবুজ মিয়া (৩৫) এর বাড়িতে তার ছেলে আলমগীর মিয়া (১৯)কে অপহরণ করে তুলে নিয়ে জোর পূর্বক সবুজ মিয়ার কন্যা তাছলিমা আক্তারের সাথে বিয়ে দেন ওই ১১ জন। এবং বিষয়টি গোপন না রাখলে আলমগীরকে প্রাণে হত্যা করবেন বলে হুমকি দেন। বিবাহের দুই বছর পর সবুজ মিয়া যৌতুক ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে মিলন চান ও তার দুই ছেলে আলমগীর ও জালালকে আসামি করে আদালতে কাবিননামা সহ মামলা দায়ের করলে তিনি বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন। জানার পর তিনি সবুজ মিয়া তার স্ত্রী আছিয়া আক্তার ও স্থানীয় কাজী ( নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার) আঃ খালেক সহ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়েটি সামাজিক ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিয়েতে বর ও কনের পিতাগণ ছাড়াও উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মুরুব্বীয়ান সহ দুই শতাধিক লোকজনের উপস্থিতি ছিল।

বিয়ের পর মাস ছ’য়েক মিলন চানের বাড়িতেই আলমগীর ও তাহমিনা দম্পতি বসবাস করেছিল। পরে পারিবারিক কলহের জের ধরে আলমগীর তার স্ত্রীকে নিয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে প্রায় দেড় বছর বসবাস করে। মিলন চানের স্বামী ও আলমগীরের বাবা তাহির মিয়াও এ কথা স্বীকার করেন। গত ৮ অক্টোবর রাত দশটায় আলমগীরের শশুর সবুজ মিয়ার দোকানে আলমগীর ও তার স্ত্রী তাহমিনার মধ্যে ঝগড়া মারামারি হয়। ঝগড়ার সময় তাহমিনার বাবা সবুজ মিয়া, আলমগীরের ভাই জালাল ও তার মা মিলন চানও সেখানে ছিলেন । তাহমিনা তার বাবা সবুজ মিয়া ও মিলন চান রক্তাক্ত জখম হন। সবুজ মিয়ার দোকানটি মিলন চানের বসত গৃহের সন্নিকটে। ঘটনায় সবুজ মিয়া বাদী হয়ে ১৪ অক্টোবর আলমগীর তার মা-বাবা ও এক ভাইকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগ- ২ আদালতে মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় ১৮ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় আসামি করেন আলমগীর তার মা ও ভাই জালালকে। এদিকে নিবন্ধন অনুযায়ী আলমগীরের জন্ম তারিখ পহেলা অক্টোবর ২০০২। সে অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ১৯ বছর। বিয়ের সময় তার বয়স ছিলো ১৭ বছর। নিবন্ধনটি অনলাইনে রয়েছে ।

বিয়ের কাবিননামায় আলমগীরকে মোঃ আঃ রহিম নাম দিয়ে নিবন্ধন অনুযায়ী জন্ম তারিখ উল্লেখ করা ২ অক্টোবর ১৯৯৭। এ নামে কোনো নিবন্ধন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে কিংবা অনলাইনে পাওয়া যায় না। কনে তাহমিনার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয় ১৮ জানুয়ারি ২০০০ সাল। উসমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খাতায় তাহমিমার জন্ম তারিখ লিখা রয়েছে ৫ ডিসেম্বর ২০০৪। স্থানীয় বেশ কয়েকজন মুরুব্বি জানান, বিয়ের সময় ইমাম সাব (কাজী আঃ খালেকের সহকারী) উপস্থিত ছিলেন। বয়স কম হলে তিনি কাবিন রেজিস্ট্রি করতেন না।

কাজী আঃ খালেক বলেন, মেয়ের বয়স ১৮ ও ছেলের বয়স ২১ ছাড়া তিনি কোনো কাবিন রেজিস্ট্রি করেন না। তার সামনে অবশ্যই বয়সের প্রমাণ পত্র পেশ করতে হয়। আলমগীর ও তাহমিনার কাবিন করার সময় তিনি তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্মনিবন্ধনের কোনো ফটোকপি বা নাম্বার রেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব রাখার তার কোনো প্রয়োজন নেই।