অনুমতি ছাড়া ভিন দেশের পতাকা টানানো বাংলাদেশের আইন পরিপন্থী। যার জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের সাজা হতে পারে বলে পতাকা বিধানে উল্লেখ রয়েছে।
সেক্ষেত্রে মামলা করলে পাকিস্তান এ শাস্তি পেতে পারে বলে জানান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস।
এদিকে, টানা দ্বিতীয়দিনের মতো মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) পাকিস্তানের পতাকা টানিয়ে খেলার পরও বিসিবির নিরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক ক্রিকেটার জিএস হাসান তামিম।
সময়টা ১৯৮০ সাল। বাংলাদেশে দুইদিনের ম্যাচ খেলতে আসেন ইমরান খান, জাভেদ মিয়ানদাদ, আবদুল কাদিরদের সমন্বয়ে গড়া তখনকার বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেমে সালামের বিপরীতে উত্তর দেন ‘নমস্তে’ পাকিস্তানের এক ক্রিকেটার। খবরের কাগজে তা প্রকাশের পর ফুঁসে ওঠে সারাদেশ।
ম্যাচের দ্বিতীয়দিনই দর্শকদের তাণ্ডবে ম্যাচ পণ্ড হয়। আহত হন জাভেদ মিয়ানদাদ ও ইকবাল কাসিম। গ্রেপ্তার হন প্রায় ৪০ জন।
চার দশক পর পাকিস্তান আবারও পুরনো রূপে। অনুমতি ছাড়া মিরপুরে পতাকা টানিয়ে অনুশীলন করলেন। যা কি না সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থি। আছে শাস্তির বিধানও।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস বলেন, পতাকা যদি উত্তোলন করতেই হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা প্রথমে উত্তোলন করতে হবে। এছাড়া নামানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা শেষে নামাতে হবে। এক্ষেত্রে দুই দেশের পতাকার আয়তন এক হতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান যেভাবে মাঠের মধ্যে তাদের পতাকা উত্তোলন করেছে, এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে। এজন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
চার দশক আগের সেই ম্যাচে খেলা ১১ জন ক্রিকেটারের একজন জিএস শামীম। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সেদিনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কথা জনালেন। চারপাশে পতাকা টানিয়ে খেলার ঘটনায় বিসিবির নিবর ভূমিকায় ক্ষোভ ঝাড়লেন।
সাবেক ক্রিকেটার জিএস হাসান তামিম বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কেন হলো, কিভাবে হলো, বোর্ড দেখল না এমনকি তাদের কর্মকর্তারাও দেখল না। বাংলাদেশে এর আগে ইংল্যান্ড দল এসেছে, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া খেলতে এসেছে তারা তো চারদিকে পতাকা তোলে প্রাকটিচ করেনি।
সুতরাং পাকিস্তান কেন করবে?
বিজয়ের মাসের ঠিক মাস খানেক আগে পাকিস্তানের এমন আচরণ স্বাধীন দেশে কিসের ইঙ্গিত দেয়, তা নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও বিসিবি থেকে পাওয়া যায়নি কোনো সদুত্তর।
এর আগে পতাকা ইস্যুতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সময় নিউজকে বলেছিলেন, পাকিস্তানীদের এ ঔদ্ধত্যের কারণও আছে। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী ছিল; জামায়াত ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা এখনও আছে। তরুণদের মধ্যে তাদের একটা বিরাট প্রভাব আছে। পাকিস্তানের প্রেম আছে। সুতরাং আমি মনে করি, পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে কোয়েশ্চেন করতে হবে, কৈফিয়ত চাইতে হবে এবং তাদের এই ঔদ্ধত্যের জন্য বাংলাদেশের কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে তাদের ক্রিকেট টিমের এই দেশে খেলবার কোনো দরকার নেই।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও বিসিবির সাবেক পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দীন মোহাম্মাদ আলমগীর বলেন, বিশ্বকাপের সময় তারা কিন্তু তাদের পতাকা উড়িয়ে অনুশীলন করেছিল। এটা নিয়ে কিন্তু সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে অনুশীলন করা এটা কিন্তু আমাদের অনেকের সেন্টিমেন্টের বিষয় আছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা আমাদের দেশে বা স্টেডিয়ামগুলোতে উড়বে আর আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ মেনে নেব সেটা কিন্তু আমরা কেউই কামনা করি না। ভবিষ্যতে ক্রিকেট বোর্ড এ বিষয়ে আরও সতর্ক হবে বলে মনে করি।