ফুসফুস ক্যানসার একটি মরণরোগ। পুরুষই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। তবে নারীদের হারও ক্রমে বাড়ছে। বয়স্কদের মধ্যে এ রোগের হার বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে এ ক্যানসার নিরাময়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম কারণ। তামাকের ধোঁয়ায় থাকে ক্যানসার উৎপাদক বিভিন্ন উপাদান। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের বায়ুপথের শ্বাসনালির অভ্যন্তরীণ দেয়ালের আবরক কলায় দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। এ পরিবর্তিত কোষগুলো দ্রুত বিভাজিত হয়ে জন্ম দেয় ফুসফুসের ক্যানসার।
তবে ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিলে ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে। আবার ধূমপান করেন না অথচ ধূমপায়ীর সংস্রবে থাকেন, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ধূমপানের ফলে অন্যান্য স্থান, যেমন- মুখ, জিহ্বা, বাকযন্ত্র বা ল্যারিঙ্কস, খাদ্যনালি ও মূত্রথলিতেও ক্যানসার হতে পারে।
উপসর্গ : ফুসফুসের ক্যানসারের উপসর্গ নির্ভর করে ক্যানসারের আকার ও অবস্থানের ওপর। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে। এ পর্যায়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্যানসার ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। ফুসফুসে সাধারণত যেসব উপসর্গগুলো দেখা যায় তা হলো- স্থায়ী কাশি ও শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, রক্তরঞ্জিত শ্লেষ্মা, ওজন কমা ও স্বরভঙ্গ। যদি বয়স চল্লিশ বছরের ওপরে হয় এবং উল্লিখিত উপসর্গ দুসপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
চিকিৎসা : ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা তিনভাবে করা যায়। তা নির্ভর করে ক্যানসারের আকার, ব্যাপ্তি ও কোষের ধরনের ওপর। কখনো কখনো একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সার্জারি : এতে আক্রান্ত ফুসফুসের অংশটি শরীর থেকে অপসারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের ও ক্ষুদ্রাকৃতি ক্যানসারের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সার্জারির মাধ্যমে এ ক্যানসার নিরাময়ে সম্ভাবনা বেশি।
রেডিওথেরাপি : এ পদ্ধতিতে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করার জন্য উচ্চশক্তির বিকিরণ রশ্মি প্রয়োগ করা হয়। এ জন্য ব্যবহৃত হয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক্স-রে মেশিন, লিনিয়ার এক্সিলেটার, কোবাল্ট ইউনিট ইত্যাদি যন্ত্র।
কেমোথেরাপি : এ পদ্ধতির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ক্যানসারবিধ্বংসী ওষুধ। অধিকতর অগ্রসর বিশেষ ধরনের ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির ব্যবহার করা হয়।
প্রতিরোধের উপায় : ধূমপান ছাড়তে হবে। যদি শুরু করে থাকেন, তা হলে এখনই বন্ধ করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এক্স-রে করান (বেশি মাত্রার ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এক বছর অন্তর অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগ
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরে বাংলানগর, ঢাকা
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা