পদ্মায় পানির উচ্চতা ও স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তিনটি ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ ছাড়া সচল ফেরিগুলোর গতিও কমে গেছে। এতে ঘাটের দুই পাড়ে দেখা দিয়েছে গাড়ির লম্বা লাইন। গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ২৯ সেপ্টেম্বর। হকরাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে পদ্মা ও যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা বেড়েছে। এতে নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের বিপরীতে চলতে না পারায় এই নৌপথের ছোট-বড় তিনটি ফেরি কয়েক দিন ধরে ঘাটে বসে আছে।
তিন ফেরি বন্ধ এবং নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে সচল ফেরির ধীর গতির জন্য উভয় ঘাটে যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপারের জন্য ছোট-বড় মোট ১৮টি ফেরি ছিল। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুটি রো রো (বড়) ফেরি এই নৌপথ থেকে সরিয়ে ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। পানি ও স্রোতের তীব্রতা বাড়ার জন্য বাকি ১৬টি ফেরির মধ্যে এক সপ্তাহ আগে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি সন্ধ্যামালতী বসে আছে। এ ছাড়া ইঞ্জিন দুর্বলের কারণে স্রোতের বিপরীতে ঠিকমতো চলতে না পারার শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে আরেক ইউটিলিটি ফেরি চন্দ্রমল্লিকা এবং বড় ফেরি খানজাহান আলী বসে আছে। বাকি ১৩টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে রোববার দুপুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার ঢাকাগামী যানবাহনের দুটি লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। দুটি লাইনে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী জরুরি গাড়িসহ কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য গাড়ি আছে। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে ফেরিতে উঠতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা থেকে আসা সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস নামক যাত্রীবাহী বাসের চালক হাবিবুর রহমান বলেন, দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রায় ১০০ যাত্রীবাহী বাস এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছে।
যশোরের বেনাপোল থেকে আসা গাজীপুরগামী কাভার্ড ভ্যানের চালক আলামিন শেখ বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে লম্বা লাইনে আটকা পড়েন। সারা রাত শেষে আজ দুপুর গড়িয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ফেরির নাগাল পাননি। তাঁর মতো এ রকম শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি লাইনে অপেক্ষা করছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, এই নৌপথের অধিকাংশ ফেরির বয়স অনেক হয়েছে। ফেরির বয়স যথেষ্ট হওয়ায় অধিকাংশ ফেরির ইঞ্জিন বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।¯স্রোতের বিপরীতে ঠিকমতো চলতে না পেরে তিনটি ফেরি বসে আছে। এতে ফেরি সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় লাগছে অনেক বেশি। এতে ঘাটে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সোবহান বলেন, এই নৌপথে চলাচলরত সবচেয়ে ভালো ফেরি স্রোতের বিপরীতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ নটিক্যাল মাইল চলতে পারে। সেখানে বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তে স্রোতের গতিবেগ আছে ৮ থেকে ৯ নটিক্যাল মাইল। এত স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে দুর্বল ইঞ্জিনসম্পন্ন ফেরির বেগ পেতে হচ্ছে, যে কারণে মাঝেমধ্যে ফেরিকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।