সরগরম হয়ে উঠেছে বিএফডিসি। সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের সমিতির ভোট ২৫ অক্টোবর। গত নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৬২৪ জন। পরে খসড়া থেকে বাদ পড়া ও নতুন মিলে প্রায় ১৮১ জনকে সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। তাঁদের ভোটাধিকার নেই। আবার প্রায় ২০ জনকে করা হয়েছে নতুন ভোটার।
শিল্পী সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদি নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৪৪৯ জন ভোটারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন বোর্ড। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তালিকা থেকে বাদ পড়া অনেক ভোটার। তাঁদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্রের যে ধারার ওপর ভিত্তি করে ভোটার তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, একই নিয়মে আবার অনেককেই রেখে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে করা হয়েছে নতুন ভোটার।
শিল্পী সমিতির সদস্যপদের আবেদনের শর্ত হিসেবে গঠনতন্ত্রের ৫ (ক) ধারায় আছে—বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত ন্যূনতম পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অবিতর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। কার্যকরী পরিষদে আবেদন গৃহীত হলেই তিনি পূর্ণ সদস্যপদ পাবেন এবং ভোটাধিকারসহ কার্যকরী পরিষদের যেকোনো পদের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আবেদনকারীকে পেশাগতভাবে অবশ্যই চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হতে হবে।
নতুন ভোটার তালিকায় এমন অনেক নায়ক-নায়িকা ভোটার হয়েছেন, যাঁদের কারোরই এ পর্যন্ত পাঁচটি ছবি মুক্তি পায়নি। ডি এ তায়েবের মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা ২, মিষ্টি জান্নাতের ৪, আসিফ নূরের ৩, বেগম প্রেমার ৩, বিন্দিয়া কবিরের ৩, আরিয়ান শাহর ২, শ্রাবণ খানের ২, শ্রাবণ শাহর ২ এবং জেবা চৌধুরীর ১টি। আবার নতুন যে ১৯ জন ভোটার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে নায়িকা শিরিন শিলার ৪টি, এইচ আর অন্তরের ১টি, সানজু জনের ৪টি, জলির ৩টি, তানহা তাসনিয়ার ৩টিসহ অনেকেরই মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা ৫–এর কম।
নিয়তি, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে ও অঙ্গার নামে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে চিত্রনায়িকা জলির। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্য হওয়ার আবেদনের সুযোগই নেই তাঁর। কিন্তু তিনি এবারের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। কীভাবে?—জানতে চাইলে জলি বলেন, ‘আমাকে সাক্ষাত্কারের জন্য ডাকা হয়েছিল। সেখানে মিশা সওদাগর, জায়েদ খানসহ কমিটির অনেকই ছিলেন। এরপর আমাকে ভোটার করা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’ একই কথা বললেন, ভোলা তো যায় না তারে, ভালো থেকো ও ধূমকেতু নামে মুক্তিপ্রাপ্ত তিন ছবির নায়িকা ও নতুন ভোটার হওয়া তানহা তাসনিয়া।
আবার ওই একই ধারায় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন নায়ক শান, ফিরোজ শাহ, নায়িকা অধরা খান, তিতান চৌধুরীসহ অনেকেই। শাকিব-অমিত কমিটির ফান্ডে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে গত দুই বছর আগে তাঁরা ভোটার হয়েছিলেন।
অধরা খানের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নায়ক ও মাতাল। তাঁকে এ বছর ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চুপি চুপি প্রেম ছবির নায়ক শান ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে গতবার ভোটার হয়েছিলেন। এবার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম। এই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘অনেকেই এক, দুই বা তিনটি ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে নতুন ভোটার হয়েছেন। ছবির সংখ্যা ৫–এর কম, এ রকম এমন অনেকে আগে থেকেই ভোটার ছিলেন, তাঁরাও বাদ পড়েননি। তাহলে আমার নাম বাদ দেওয়া হলো কেন? গঠনতন্ত্রের ধারা সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে কথা বলায় চলতি কমিটির এক নেতা হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শান। তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকায় নাম না পেয়ে সমিতির কার্যালয়ে জানতে গিয়েছিলাম। এক নেতা হুমকি দিয়ে বলেছেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে সহযোগী সদস্যপদও থাকবে না।”’
আবার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পাঁচ ছবিতে অভিনয় করেও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন শরীফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি ভোটার তালিকায় নাম না পেয়ে অবাক হয়েছি। আমি পাঁচ ছবিতে বড় বড় চরিত্রে কাজ করেছি। সমিতির নেতাদের এ কোন অবিচার!’
এ ছাড়া অভিনেত্রী পারভীন প্রায় চার শ, মিজানুর রহমান প্রায় পাঁচ শ ছবিতে অভিনয় করেও এবারের ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছেন। পারভীন বলেন, ‘২৮ বছর ধরে অভিনয় করছি। ১৫ বছর ধরে ভোট দিয়ে আসছি। এবার ভোটার তালিকা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ কেন? তিনি বলেন, ‘সমিতির কার্যালয়ের সামনের জায়গাটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি আগের কমিটির অমিত হাসানের উদ্যোগে হয়েছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন এ জায়গায় গাছ ও ফোয়ারা স্থাপন করেছেন তিনি। কিন্তু চলতি কমিটির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের দাবি, কাজটি তাঁর করা। একদিন বলেছিলাম, আপনি না, এটি অমিত ভাই করেছেন। এই কথাই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এসব নিয়ে চলতি কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতির কার্যকরী পরিষদ ও উপদেষ্টামণ্ডলী মিলে যাচাই–বাছাই করে গতবারের ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। সত্যি বলতে চাল বাছতে গেলেও কিছু ভালো চাল পড়ে যায়। হয়তো আমাদের বেলাতেও সে রকম কিছু হয়েছে। যোগ্য কিছুসংখ্যক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।’
ভোটার বাদ দেওয়া, রেখে দেওয়া, নতুন ভোটার করার এ কাজগুলো অসততা, বললেন মিশা সওদাগরের কমিটির সহসভাপতি নায়ক রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘একই নিয়মে একজনকে বাদ দিচ্ছেন, আরেকজনকে নিচ্ছেন, এটা কোন নিয়ম? যাঁরা বাদ দিচ্ছেন, তাঁরা কি তাঁদের ভোট যাঁরা দেবেন না, তাঁদের বাদ দিচ্ছেন?’
ভোটার তালিকা সংশোধনীর যাচাই–বাছাই কমিটিতে ছিলেন রিয়াজ। তিনি কেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেননি? এমন প্রশ্নে রিয়াজ বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকা দু–একজন মিলে করেছেন। কমিটির সবাই মিলে তালিকাটা দেখতে মিটিং করার কথা বলেছি বারবার। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সে সুযোগ দেননি।’ আর এ ব্যাপারে উল্টো রিয়াজকেই দুষলেন মিশা। তিনি বলেন, ‘যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের থেকে ৪৫ জনকে তালিকায় রাখতে চেয়েছিলাম। রিয়াজই বাধা দিয়েছেন।’