► নেতাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি নয়
► টাকা নিয়ে কমিটি করার ব্যাপারে মুখ খুলেছেন অনেকেই
► চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক হারুনুর রশিদকে সদস্যসচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন
অবশেষে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যুবলীগের দাপুটে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। গতকাল রবিবার রাতে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুবলীগের আগামী কমিটিতে সংগঠনটির নেতাদের বয়সসীমা ৫৫ বছর বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়া যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস সফল করার লক্ষ্যে গঠন করা হয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্যসচিব করা হয়েছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির। বৈঠকে উপস্থিত যুবলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।
সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস সামনে রেখে সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে বৈঠকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বাগত ভাষণ দেন। এরপর তিনি সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, ফারুক হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নানা অপকর্মে যুক্ত থাকার বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরেন। তুহিন সাভার ও আশুলিয়া কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে অন্য দলের নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার বিষয়টিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, যুবলীগের অনেক কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এখন এ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে। ফলে যাঁদের সারা দেশে পুরো সংগঠন নিয়ে ধারণা আছে, যাঁদের কমান্ডিং ভয়েস আছে, তাঁদের নেতৃত্বে আনতে হবে। আর যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, যাঁরা অপকর্মে যুক্ত থেকে লাভবান হয়েছেন তাঁরা যেন আর সুযোগ না পান।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব জানি। তোমরা সবাই দায়ী। এসব কথা তোমরা আগে বলনি কেন? এখন আমি জানার পরে যখন ব্যবস্থা নিচ্ছি, সবাইকে ধরছি, তখন আর তোমাদের এসব কথা বলার দরকার নেই।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এখন তোমরা এসব বলছ কেন? আগে নেত্রীকে বলতে। তাঁকে বলতে না পারলে আশপাশে আমরা যারা আছি তাদের বলতে।’
বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ারুল ইসলাম, বেলাল হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহী, সুব্রত পাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বৈঠকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার দরকার নেই। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কই কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করবেন। যুবলীগের বিতর্কিতদের যেন কোনো কাজে সম্পৃক্ত করা না হয়।
এ সময় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্যসচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে রাখতে বলেন। তবে বিতর্কিতদের কমিটিতে না রাখতেও নির্দেশ দেন তিনি। চয়ন ইসলামের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। বদনাম না থাকার কারণে তোমাকে দায়িত্ব দিলাম।’
আনোয়ারুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সভাপতিকে স্মরণ করিয়ে দেন, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক বহিষ্কৃত। তখন শেখ হাসিনা বলেন, দপ্তর সম্পাদক দরকার নেই। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিই কাজ চালিয়ে নেবে।
বৈঠকে যুবলীগের বয়সসীমা এবারের কংগ্রেসে নির্ধারণ না করে আগামী কংগ্রেস থেকে নির্ধারণের অনুরোধ জানান প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও ফারুক হোসেন। তখন শেখ হাসিনা ফারুক হোসেনকে বলেন, ‘জেলায় গিয়ে আওয়ামী লীগ কর। জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতৃত্ব দরকার।’ তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুবকদের বয়স নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে। ৬০-৭০ বছরে যুবলীগ করলে সেটা ভালো দেখায় না। পরে যুবলীগের নেতৃত্বের বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করে দেন শেখ হাসিনা। এ বয়স বেঁধে দেওয়ার কারণে যুবলীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাই আগামী কাউন্সিলে আর প্রার্থী হতে পারবেন না। সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে শেখ হাসিনা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরপরই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ—এ দুটি শাখার সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে নির্দেশনা দেন তৃণমূলের সংগঠনগুলোকে সুসংগঠিত করার।