২০১৮ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ায় ও চলতি বছরের মার্চে ইথিওপিয়ায় বোয়িং এর ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের দুটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে দুই বিমানে থাকা মোট ৩৪৬ জন যাত্রী নিহত হন। এরপর থেকে ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানে উড়তে ভীতি কাটছে না যাত্রীদের। তবে যাত্রীদের ভীতি কাটাতে উঠেপড়ে লেগেছে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। এজন্য ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে যাত্রীদের বিভিন্নভাবে নিশ্চয়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের দুটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ম্যাক্সের প্রতি আস্থা কমে গেছে। মাত্র ১৯ শতাংশ যাত্রী, যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তারা পুনরায় এই বিমানে উড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে, অনিয়মিত যাত্রীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও কম, মাত্র ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বড় কথা হলো অন্তত এক হাজার যাত্রী বলেছেন, দরকার হলে আমরা ৭৩৭ ম্যাক্সের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করব, তারপরও ওই বিমানে
অপরদিকে, বিশ্ব ফ্লাইট নিয়ে জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ফেয়ার রিসার্চ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হেনরি হারটেভেল্ট জানিয়েছেন, নিয়মিত যাত্রীদের অর্ধেক এবং অনিয়মিত যাত্রীদের ৫৫ শতাংশই বোয়িংয়ে যাত্রাকে ‘অনিরাপদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনার পর ওই মডেলের বিমান চলাচলে নিরাপত্তার সংশয় থেকে অনেক দেশই এই বিমানের চলাচল বাতিল করে। বাধ্য হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং।
তবে পুনরায় একই মডেলের বিমান সার্ভিস চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বোয়িং। তবে এটা এখনও নিশ্চিত নয় যে ঠিক কখন ম্যাক্স আবার সেবায় ফিরবে। যাত্রী সেবা চালুর আগে ম্যাক্স ৭৩৭ এর এমসিএএস সিস্টেমের পরিমার্জিত সংস্করণ জমা দিতে হবে বোয়িংকে। আশা করা যায়, প্রক্রিয়াটি চলতি মাসের শেষের দিকে শেষ হতে পারে।
এদিকে যাত্রীদের শতভাগ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিয়েছে, ম্যাক্স ৭৩৭ যাত্রীদের নিয়ে আকাশে উড্ডয়নের আগে কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাধারণ কর্মচারীদের নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। তারা নিরাপদে অবতরণের পর যাত্রীদের নিয়ে আকাশে উড়াল দেবে বোয়িং ম্যাক্স ৭৩৭।
তবে ম্যাক্স ৭৩৭ মডেলের চিফ টেস্ট পাইলট জেনিফার হেন্ডারসন বলছেন, ‘আমাদের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুই হলো যাত্রীদের নিরাপত্তা। আমাদের এই মডেলের বিমান যাত্রীদের নিয়ে উড়তে যে শতভাগ প্রস্তুত তা নিশ্চিত করতে একশোর বেশি প্রকৌশলী কাজ করে যাচ্ছেন।’
মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের সফল ৭৩৭ সিরিজের সর্বশেষ মডেলটি হচ্ছে ম্যাক্স। বাণিজ্যিকভাবে এ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট চালানো শুরু হয় ২০১৭ সালে।
দুই বছর পর না হতেই প্রথমবারের মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ে এই উড়োজাহাজ। গত বছরের ২৯ অক্টোবর জাকার্তার কাছে জাভা সাগরে লায়ন এয়ারের একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিধ্বস্ত হলে ১৮৯ আরোহীর সবাই নিহত হন।
এর পাঁচ মাসের মাথায় চলতি বছরের মার্চে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৭ জন আরোহীর সবাই নিহত হলে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়।
দুই দুর্ঘটনার কারণ একই কি না- তা এখনও জানা যায়নি। তবে দুটি উড়োজাহাজই ছিল নতুন, আর সেগুলো বিধ্বস্ত হয় উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যে।
এই পরিস্থিতিতে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অধিকাংশ দেশ এবং অধিকাংশ এয়ারলাইন্স বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।