র্যাব হেফাজতে রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিচ্ছেন যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেননকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন তাঁকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন তাঁরা। এর বিনিময়ে তিনি তাঁদের ক্যাসিনো কারবারে সহযোগিতা করতেন। এ ছাড়া ক্যাসিনোর টাকা যুবলীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাকেও দিতে হতো। দুবাইয়ে অবস্থানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকেও নিয়মিত কোটি কোটি টাকা পাঠানো হতো। কারণ তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। জিসানকে টাকা না দিলে তাঁর ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকি দিতেন।
তাঁদের দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে র্যাব এরই মধ্যে অনেক সত্যতা পেয়েছে। খালেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে রাশেদ খান মেননসহ যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকে।
এসব তথ্য জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক র্যাব কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্যাসিনোর টাকা নিয়ে খালেদকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবার নাম রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় খালেদ আমাদের জানিয়েছেন। এখন আমরা তদন্তের মাধ্যমে খালেদের দাবির সত্যতা খুঁজছি। সত্য তথ্য উদ্ঘাটনে খালেদ যেসব প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নাম বলেছেন, প্রয়োজনে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
গতকাল রবিবার র্যাব সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্যের পাশাপাশি আরো জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, সহসভাপতি ও সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এনামুল হক আরমানকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া সব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সরকারের উচ্চ পর্যায়সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে যাঁদের বিরুদ্ধে অপকর্মের আমলনামা বেশি পাওয়া যাচ্ছে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তাঁদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে সম্রাট ও খালেদ রিমান্ডে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা অস্বীকার ও মিথ্যা দাবি করে রাশেদ খান মেনন গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রিমান্ডে যারা এসব তথ্য দিচ্ছে, তা সত্য নয়। যেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার বলেছেন ক্যাসিনোর বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না, সেখানে ক্যাসিনোর ব্যাপারে আমি কী করে জানব। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে।’
সম্রাট ও খালেদের রিমান্ডে দেওয়া তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে এরা বরাবরই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে। সেসব যাচাই-বাছাই চলছে।’
এ পর্যন্ত শামীম সেলিম যা বলেছেন : এদিকে জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মানি লন্ডারিং মামলায় জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।’
সিআইডি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে শামীমের কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ঠিক একইভাবে সেলিম প্রধানের পাঁচ শতাধিক কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
প্রধানমন্ত্রী গত ৭ সেপ্টেম্বর দলের যৌথ সভায় দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে পর্যায়ক্রমে সম্রাট, খালেদ, জি কে শামীমসহ সারা দেশে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।