বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগরভবনে খোকার মরদেহ নেয়া হলে উপস্থিত সকলের নিকট দোয়া ও ক্ষমা চান ঢাকা দক্ষিণের মেয়র।

এসময় খোকার আদর্শ ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ব্যাক্তি জীবনে কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি ঢাকাবাসীর জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখন আমাদের তার জন্য দোয়া করতে হবে। এছাড়া সাদেক খোকার আদর্শ ধারণ করে নগরবাসীর উন্নয়নে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

নগর ভবনে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের শেষ মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার লাশবাহী কফিন আসলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেকে। সেখানে তার তৃতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে বাদ জোহর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জানাজায় মানুষের ঢল নামে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেয়া হলে সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা। এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা।

রাজধানীর নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, কাকরাইল এলাকার সড়কে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের সমাগম। এ সময় ওই এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার কিছু সময় আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে খোকার লাশ সেখানে নেয়া হয় নয়াপল্টনে। এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খোকাকে সর্বস্তরের জনতা শেষ শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা খোকার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পুষ্প অর্পণের মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খোকার মরদেহবাহী গাড়িটি পৌঁছায়। পরে দক্ষিণ প্লাজায় অস্থায়ীভাবে স্থাপিত মঞ্চে মরদেহের কফিনটি রাখা হয়। সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ সকাল ৮টা ২৮ মিনিটের দিকে খোকার মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বাংলাদেশ সময় বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে তার মরদেহ নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন তার স্বজনরা।

বিমানবন্দরে খোকার মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিমানবন্দর থেকে খোকার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনে নেওয়া হয়।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা অংশ নিয়েছেন। জানাজা শেষে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় তার পরিবার।

গত রবিবার (৩ নভেম্বর) রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিট) নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা।