বিপিএলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট মাতিয়ে বেড়ান। গতির ঝড়ে নাভিশ্বাস তোলেন ব্যাটসম্যানদের। অথচ তিনি নিজে অস্থির হয়ে ছিলেন লক্ষ্মীপুর যাওয়ার জন্য। মা-বাবাকে দেখার জন্য হাঁসফাঁস করেন রীতিমতো। অভিভাবকদের আদরের হাসান মাহমুদ কাল তাঁদের সঙ্গে থাকার সময়ই পেলেন জীবনের সবচেয়ে বড় সুখবরটি। পাকিস্তান সফরের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন যে ২০ বছরের এই পেসার!

বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে হাসানের ১৩ ম্যাচে ১০ উইকেট কিংবা ৯.২০ ইকোনমি খুব চোখ-ধাঁধানো মনে হচ্ছে না তো? কিন্তু প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের তাঁর ওপর বড় আস্থা। দলের নেওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে সেটিই বললেন তিনি, ‘হাসানের ভেতর দারুণ কিছু করার প্রতিশ্রুতি আছে। বলে বেশ গতি। উইকেট নিতে জানে। কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও ওর বোলিং দেখে খুব খুশি। আমরা চাই, জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের অধীনে থেকে নিজেকে আরো পরিণত করুক। বয়স তো মাত্র ২০ বছর, আরো অনেক অনেক উন্নতির সুযোগ আছে।’ জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় স্বভাবতই ভীষণ উচ্ছ্বসিত হাসান। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দেওয়ার ঘোষণা কাল দেন তিনি, ‘বিপিএল শেষে দুদিনের ছুটিতে লক্ষ্মীপুর এসেছি। আব্বু-আম্মুর সঙ্গে থাকার সময়ই পেলাম জীবনের সবচেয়ে বড় সুসংবাদ। অবশ্যই জাতীয় দলে ভালো করার জন্য আমার চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না।’

হাসানের অন্তর্ভুক্তি অবশ্যই চমক। তামিম ইকবালের ফেরাটা একেবারেই না। বিশ্বকাপটা ভালো যায়নি, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কা সফরে আরো খারাপ। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে বিশ্রাম নেন। ভারত সফরে যাননি সন্তানসম্ভাবনা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য। বিপিএলে তামিম খারাপ করেননি। ঢাকা প্লাটুনের জার্সিতে ১২ ম্যাচে ৩৯.৬০ গড়ে ৩৯৬ রান করলেও ১০৯.৩৯ স্ট্রাইকরেটের কারণে সমালোচিতও হয়েছেন। তবে অভিজ্ঞ এই ওপেনারের ওপর আস্থা রেখেছেন নির্বাচকরা।

১৫ সদস্যের স্কোয়াডে অবশ্য ওপেনারের ছড়াছড়ি। তামিম, লিটন দাস, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার। তবে এর মধ্যে প্রথম তিনজনকেই জাতীয় দলে ওপেনিংয়ে বিবেচনা করছেন বলে জানান প্রধান নির্বাচক, ‘তামিম-লিটন-নাঈমকে ওপেনার হিসেবে নিয়েছি। আর শান্ত (নাজমুল), আফিফরা মিডল অর্ডারে। সৌম্যকে তো বিপিএলে কুমিল্লা দলে মিডল অর্ডারে খেলিয়েছি এই জাতীয় দলের কথা মাথায় রেখেই।’ সেই মিডল অর্ডার অবশ্য বড্ড ভঙ্গুর। বিপিএলে দুর্দান্ত খেলা মুশফিকুর রহিম নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিস্তান সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ওই টুর্নামেন্টে টপ অর্ডারে অনেকে আলো ছড়ালেও মিডল অর্ডারে সেই চেনা অন্ধকার। খুব বেশি বিকল্প তাই ছিল না নির্বাচকদের কাছে। বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যলেঞ্জার্সের হয়ে ১৩ ম্যাচে ৪৯.১১ গড়ে ৪৪২ রান করা ইমরুল কায়েসও ছিলেন নির্বাচকদের বিবেচনায়। কিন্তু ইনজুরির কারণে তাঁর কপাল পুড়েছে বলে জানান মিনহাজুল, ‘দল ঘোষণার আগেও ইমরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওর পায়ে টান লেগেছে। সন্ধ্যায় স্ক্যান করাবে। যে কারণে ইমরুলের জায়গায় আমরা শান্তকে নিয়েছি।’

ভারত সফরের সর্বশেষ দলের মুশফিক নেই। সঙ্গে বাদ পড়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন, আবু হায়দার, তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানি। তামিমের সঙ্গে ফিরেছেন মাহেদী হাসান, নাজমুল হোসেন ও রুবেল হোসেন। আর একেবারে নতুন করে ডাক পেয়েছেন পেসার হাসান। দলে স্পেশালিস্ট স্পিনার বলতে আমিনুল ইসলাম। সঙ্গে ফেরানো হয়েছে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মাহেদী হাসানকে। এ ক্ষেত্রেও বিকল্পের অভাবকে সামনে নিয়ে আসেন প্রধান নির্বাচক, ‘বিপিএলে স্পিনাররা তো মোটেই ভালো করেনি। শীতের মধ্যে ওদের ভালো করাটা অবশ্য কঠিন ছিল। লাহোরেও একই রকম কন্ডিশন। তবু মাহেদীকে তো নিয়েছি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আমরা সব সময় ওকে বিবেচনায় রাখি।’ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি খেলেই বাদ পড়েন মাহেদী। গত বছর ত্রিদেশীয় সিরিজের স্কোয়াডে থাকলেও দুই ম্যাচে না খেলেই বাদ পড়েন আবার। এবারের বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে অফস্পিনে ১৩ ম্যাচে ১২ উইকেট পাওয়ার পাশাপাশি তিন ফিফটিতে ২৫৩ রান করে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন। সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য মুখিয়ে আছেন মাহেদী, ‘এবার অনেক দিনের জন্য জাতীয় দলে থাকতে চাই।’

১৫ সদস্যের স্কোয়াডে পেসারই পাঁচজন। এ ক্ষেত্রে কাছের পাকিস্তান সফরের পাশাপাশি দূরের বিশ্বকাপও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুলের ভাবনায়, ‘লাহোরে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের ভালো করার কথা। তা ছাড়া এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেও আমাদের বেশি নির্ভর করতে হবে পেস বোলারদের ওপর। সে কারণেই স্কোয়াডে পাঁচ পেসার।’

পাকিস্তান সফর সামনে রেখে আজ থেকে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে তিন দিনের সংক্ষিপ্ত অনুশীলন ক্যাম্প।