নিজের সিএনজিচালিত অটোরিকশার সিটে কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা এর মালিককে ফেরত দিলেন জয়নাল আবেদিন ওরফে জয়নাল পাগলা (৫৫)। প্রচণ্ড অভাবের মধ্যেও বেঁচে থেকে এমন কাজ করে বিরাট মানসিক শক্তি ও সৎ মানুষের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। টাকা ফেরত পেয়ে সততার পুরস্কার হিসেবে জয়নালকে কিছু টাকা দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেনি।
গতকাল বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহ শহরে জুবলীঘাট এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। জয়নাল আবেদীন ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার পশ্চিম দাপুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। ঘটনাটি জয়নাল কাউকে না বললেও আজ বৃহস্পতিবার টাকা ফেরত পাওয়া দুই ব্যক্তি ময়মনসিংহের গৌরীপুর এলাকায় জয়নালের খোঁজে এসে পুরস্কার হিসেবে টাকা দিতে গেলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিএনজিচালক জয়নাল বুধবার বিকেলে গৌরীপুর থেকে দুজন যাত্রী নিয়ে ময়মনসিংহের একটি মোটরসাইকেল শোরুমে নামিয়ে দিয়ে চলে আসেন। নির্দিষ্ট একটি স্টেশনে গিয়ে সিএনজি থামানোর পর দেখতে পান সিটের ওপর একটি ছোট ব্যাগ পড়ে রয়েছে। খোলে দেখেন ব্যাগের ভিতর অনেক টাকা। এ অবস্থায় ব্যাগটি নিজের কবজায় নিয়ে সন্ধান শুরু করেন সিএনজিতে বহনকারী দুই যাত্রীর।
অন্যদিকে ওই দুই যাত্রী গৌরীপুর পৌরসভার সেনিটারি ইন্সপেক্টর মো. শফিকুল ইসলাম ও লাইসেন্স পরিদর্শক আতাউর রহমান মোটরসাইকেল কিনে টাকা দেওয়ার সময় ব্যাগটির সন্ধান করে না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন সিএনজি চালক জয়নাল। তিনি ওই দুই যাত্রীকে ভালোভাবে দেখে শুনে জানতে চান তাদের কিছু হারানো গেছে কি না। এ কথা বলার সাথে সাথে দুই যাত্রী জয়নালকে জড়িয়ে ধরে ব্যাগটি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জয়নাল টাকার ব্যাগটি তুলে দেন। পরে জানা যায় ওই ব্যাগে মোটরসাইকেল কেনার জন্য দুই যাত্রী ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন।
জয়নাল আবেদিন জানান, তিনি চার কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন। সন্তানদের পড়াশোনা করাতে হিমসিম খান। দৈনিক ৭০০ থেকে একহাজার টাকা উপার্জন করেন। এর মধ্যে কিস্তিতে নেওয়া সিএনজি কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। যা থাকে তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে।
তিনি জানান, তার বর্তমান অথনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা অনেক। এরপরও তিনি লোভ করেননি। সৎভাবে বাঁচার জন্যই এ লোভ করেননি হতদরিদ্র জয়নাল। জয়নালের এই সৎতার খবর প্রচার পর এলাকার অনেকেই জয়নালকে দেখতে ও মোবাইলে সেলফি তুলতে তার বাড়িতে গিয়েছে।