• অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর ২০ বছরের কারাদণ্ড।
  • চার মাসে হোটেলে থেকে বিল দেন ৩ কোটি টাকার বেশি।
  • দুদক ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়ার সাড়ে ১১ কোটি টাকার অর্থসম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুটি সংস্থাই বলছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাপিয়া এই সম্পদ অর্জন করেছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুদক বলছে, প্রতারণা, অনৈতিক কাজ, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন পাপিয়া। তাঁর স্বামী মফিজুর রহমানও (সুমন চৌধুরী) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুদক ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। সংস্থাটি পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দিয়েছে। অন্যদিকে অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিং আইনের মামলার তদন্তে সিআইডি ৫ কোটি ৯ লাখ টাকা অবৈধ বা অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আয়ের প্রমাণ পেয়েছে। অর্থাৎ দুটি সংস্থার তদন্তে বহিষ্কৃত এই যুবলীগ নেত্রীর ১১ কোটি টাকার বেশি অর্থসম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারণা, অনৈতিক কাজ, মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন পাপিয়া।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলা এবং অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের আর দুটিসহ মোট তিনটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। শুধু মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি সিআইডি। পাপিয়া এখন কাশিমপুর নারী কারাগারে বন্দী আছেন।

মামলাগুলো তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিআইডির কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত অনেক দিন থেমে ছিল। এখন এই মামলার তদন্ত আবার জোরেশোরে শুরু হয়েছে।

গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি শামীমা নুর পাপিয়া, তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান চার সহযোগীসহ বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। তখন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড্ডয়নের জন্য অপেক্ষারত একটি উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে এনে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ধরা পড়ার পর পাপিয়াকে নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সময় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি, শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা করে র‌্যাব। পরে সিআইডি পাপিয়া, তাঁর স্বামী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে। আর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।

পাপিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া মানি লন্ডারিং আইনের মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, পাপিয়ার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমের ৫ কোটি ৯ লাখ টাকা আয় করেন। গ্রেপ্তারের আগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি গুলশানের ‘ওয়েস্টিন’ হোটেলে ৪ মাস ১০ দিন অবস্থান করেন। পাপিয়ার নামে বরাদ্দ হোটেলটির প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটের বিলই দেন ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তদন্ত শেষে শিগগিরই এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত র‌্যাবের দায়ের করা অবৈধ অস্ত্র রাখার মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমানকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা
আইনের তিন মামলায় র‌্যাব অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় গত বছরের অক্টোবরে আদালত পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে সাজা দিয়েছেন নিম্ন আদালত।