থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা

২০১৬ সালের এই দিনে হত্যা করা হয় কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে। চার বছর পেরিয়ে গেলেও দেশব্যাপী আলোচিত হত্যাকাণ্ডটির দোষীরা শনাক্ত হয়নি। নেই মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি।

তনুর মা বলেন, “সবাই আমার মেয়েকে ভুলে গেলেও মা হিসেবে আমি তো ভুলতে পারি না।”

তনুর পরিবার জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়।

পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট।

২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চ, কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, হত্যাকারীদের সাজার দাবিতে শুক্রবার আমাদের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসসৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে সেটি স্থগিত করেছি। তনু হত্যা মামলাটি তদন্তে সিআইডি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তনু হত্যার আসামি শনাক্ত হোক। নুসরাতের মতো তনুর হত্যাকারীদেরও সাজা হোক। 

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, বাসাজুড়ে মেয়ের স্মৃতি। সে বাসা সাজিয়েছে। যেদিকে তাকাই তাকে দেখি। তাকে ভুলতে পারি না। মেয়ের কাপড়গুলো রেখে দিয়েছি। মাঝে মাঝে বের করে দেখি। কাপড়ে মেয়ের গায়ের ঘ্রাণ নিই। আর চোখের পানি ফেলি।

তনুর মা আক্ষেপ করে বলেন, দুই বছর ধরে সিআইডি কোনো যোগাযোগ করছে না। তনুর বাবা এবং আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আগের মতো বিভিন্ন অফিসে যেতে পারি না। মৃত্যুর আগে মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেয়ের হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেলে ভালো লাগতো।

তিনি আরও বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারী কে বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিং করার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। ডিএনএ’র রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।