২১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৫৫ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৩ জন। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর দিয়ে তারা এসেছেন। এসব বন্দরে তাদের স্বাস্থ্যগত স্ক্রিনিং করা হয়েছে বলে দাবি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)।

সংস্থাটি জানায়,গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের ৪৫ জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২ হাজার ৫১৮ জন। সংশ্লিষ্টদের দাবি,হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আগত।। প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানে আছেন ৪৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ১৯ জন।

আইইডিসিআরের তথ্য মতে, এ বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের শারীরিক স্ক্রিনিং শুরু হয়। ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা স্ক্রিনিং করা যাত্রীর সংখ্যা ৩ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ৭ হাজার ৯৫৫ জন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনে ৭ হাজার ২৯ জন এবং অন্যান্য চালু স্থলবন্দরে স্ক্রিনিং করা যাত্রীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬২১ জন।

দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তরা ইতালিফেরত এবং তাদের স্বজন। গত ৮ মার্চ এ তথ্য জানায় আইইডিসিআর। এর এক সপ্তাহ পর সরকার ১৬ মার্চ দুপুর থেকে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের বাকি দেশগুলো থেকে দেশে যাত্রী প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে। আইইডিসিআর জানায়, দেশে করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগ ইতালিফেরত প্রবাসী ও তাদের স্বজন। দেশে ক্রমান্বয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

১৯ মার্চ পর্যন্ত আইইডিসিআরের তথ্য মতে, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে একজন।। আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন। যদিও একদিন আগে ১৭ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ জন। বুধবার (১৮ মার্চ) নতুন করে চার জন আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে একজন নারী ও তিন জন পুরুষ। আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা জানান, নতুন করে করোনায় আক্রান্ত চার জনের মধ্যে একজন আগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন। আর বাকি তিন জন বিদেশ থেকে এসেছেন। বিদেশফেরতদের মধ্যে দুজন ইতালি এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছেন।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার তথ্য প্রকাশ করে আইইডিসিআর। সংস্থাটি জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে দুই জন ইতালিফেরত রয়েছেন। আরেক নারীও আক্রান্ত হন, যিনি ইতালিফেরত একজনের পরিবারের সদস্য। এই তিন জনই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

অন্যদিকে ১৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে আইইডিসিআর। দেশে এই প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলো। যদিও তিনি বিদেশফেরত নন। তবে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা জানান, করোনা ভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ৭০ বছর। তিনি বিদেশ থেকে আসা ও সংক্রমিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

করোনা ভাইরাস উপদ্রুত চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে আটকে পড়া ৩১২ জন বাংলাদেশিকে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি তারা দেশে ফেরার পর হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তবে এদের মধ্যে কেউই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। সবাই সুস্থ অবস্থায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।

যদিও এরপর চীন থেকে অনেকে ফিরেছেন। তবে বিমানবন্দরে তাদের স্ক্রিনিং করা হলেও কাউকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়নি।

প্রথমে ইতালিফেরতসহ আক্রান্ত দেশ থেকে আসা মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলে আইইডিসিআর। ১৪ মার্চ থেকে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করে সরকার। এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে। এখন পর্যন্ত ১৬ জন আইসোলেশনে আছেন। আর ৪২ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।’ দেখা গেছে, বিদেশফেরতদের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হলেও অনেকেই তা মানছেন না। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিভিন্ন জনের ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকজনকে অর্থদণ্ড দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বিদেশফেরতদের মধ্যে ১৫ জেলায় ৩৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকায় অর্থদণ্ড দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) অত্যন্ত ছোঁয়াচে, যা শরীরে ১৪ দিন সুপ্ত থাকতে পারে। এই ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশে ফেরা ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইতালি, কুয়েত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে।

আইইডিসিআর জানায়, কোভিড-১৯ লক্ষণযুক্ত মার্কিন প্রবাসী ব্যক্তিটি বাংলাদেশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কোনও প্রকার যোগাযোগ ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। তার তথ্য মার্কিন দূতাবাসে জানানো হয়েছে।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে গৃহ/স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন মানছেন না এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছেন না, তারা পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। বাংলাদেশে যে পাঁচ ব্যক্তি দেশে বসেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তারা সবাই প্রবাস থেকে ফিরে আসা নিকটজনদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন।’

ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘আমাদের অনুরোধ পরিবার, সমাজ ও দেশের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে বিদেশ থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালন করুন। কোয়ারেন্টাইন পালন করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক।’

করোনা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যোগাযোগ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন নম্বর: ১৬২৬৩ আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর: ০১৫৫০০৬৪৯০১, ০১৫৫০০৬৪৯০২, ০১৫৫০০৬৪৯০৩, ০১৫৫০০৬৪৯০৪, ০১৫৫০০৬৪৯০৫, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১