মোঃ রোমান- ফরিদপুর প্রতিনিধি,

আমরা দিনের আকাশে সূর্য বা রাতের আকাশে চাঁদের চারপাশে মাঝে মাঝে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, একটি বৃত্ত চাঁদকে ঘিরে রেখেছে বা চাঁদের চারপাশে একটি বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে, এটি কেন বা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? চাঁদ বা সুর্যের চারপাশে যে একটি আলোর বৃত্তের বলয় দেকা যায় তার নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা বর্ণবলয় (colour halo)। প্রশ্ন হচ্ছে এটি কেন সৃষ্টি হয়? এক্ষেত্রে একটি কথা আছে ইংরেজীতে, Ring around the moon, means rain soon বা, চাঁদের চারপাশে বলয়ের সৃষ্টি, মানে আসন্ন বৃষ্টি। কথাটি সত্য। এর সত্যতা আছে। কারন, একটি ঝড়ের আগে অনেক উচ্চ আলোকমেঘ সৃষ্টি হয়। যখন আমরা সূর্য বা চাঁদের চারপাশে সে বর্ণবলয় দেখি আসলে তখন প্রকৃতপক্ষে খুবই পাতলা রঙিন মেঘগুলো আমাদের মাথার ২০,০০০ ফুট উপরে জমা হতে থাকে। এই মেঘগুলোতে থাকে মিলিয়ন মিলিয়ন অতি ক্ষুদ্র বরফ ক্রিস্টাল বা স্ফটিক।আর এই বর্ণবলয়ের সৃষ্টি হয় সেসব বরফ স্ফটিকের প্রতিসরণ, ও প্রতিফলন উভয়ের মাধ্যমেই। চাঁদের আলো স্ফটিকের ভেতর প্রবেশ করে এবং ঠিক ২২ ডিগ্রী কোণে প্রতিসরিত হয়। সেই স্ফটিকগুলো ঠিক সেভাবেই সজ্জিত ও বিন্যস্ত হয় ঠিক সেভাবেই, যেভাবে আমরা আমাদের চোখের সাপেক্ষে বর্ণবলয়টা দেখি। আর মূলত এ কারনেই, চাঁদ বা সুর্যের চারপাশে এই বর্ণবলয় সৃষ্টি হয়। এই বর্নবলয়েরর ব্যাস হয় ২২ ডিগ্রী(গড়ে ২১.৮৪ ডিগ্রী, লাল আলোর জন্য এর মান হয় ২১.৫৪ ডিগ্রী ও নীল আলোর জন্য হয় ২২.৩৭ ডিগ্রী)। আবার ৪৬ ডিগ্রী ব্যসেরও বর্ণবলয় দেখা যায়, তবে সেটা খুবই খুবই নগন্য। যখন দিগন্ত হতে সূর্যের উচ্চতা ১৫-২৭ ডিগ্রী থাকে তখন ৪৬ ডিগ্রী ব্যাসের বর্ণবলয় সৃষ্টি হয় যা ২২ ডিগ্রীর তুলনায় দ্বিগুন বড়ো। যখন আপনি চাঁদের চারপাশে বর্ণবলয় দেখতে পান তখন ভালোভাবে লক্ষ্য করুন, কারন, চাঁদের আলো কিন্তু খুব একটা উজ্জ্বল নয়, চাঁদের বর্ণবলয় প্রায় বর্ণহীন।কিন্তৃ আপনি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, চাঁদের সে বর্ণবলয়ের সীমানা ঘেষে ঠিক ভেতরের দিকে প্রান্তের রঙ লাল, আবার ঠিক কিনারা ঘেষেই বাইরের দিকের রঙ নীল। এই রঙগুলো খুব সহজেই সূর্যের বর্ণবলয়ের চারপাশে লক্ষ্য করলে দেখা যায়। যখন আপনি চাঁদ বা সূর্যের চারপাশে বর্ণবলয় দেখতে পান, লক্ষ্য করুন বলয়ের ভেতরের অংশটি পরিষ্কার, যেখানে বাইরের অংশটি তুলনামুলকভাবে অনেকটা বিক্ষিপ্ত রঙের।আরও লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, বলয়টির চারপাশের আকাশ স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় বেশী অন্ধকারতর। গত ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারীর ৩ তারিখে রাতে এস্তোিুয়ার আকাশে চাঁদের বর্ণবলয়ের ভেতর বৃহস্পতি গ্রহকেও বেশ ভালভাবে দেখা গিয়েছিলো। অার্কটিক অন্চলে বা উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর দিকে মুন পিলার(Moon pillar) ও সান পিলার (sun pillar)। এটিও একই কারনে ঘটে। চাঁদ হতে প্রতিফলিত আলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি সেই বরফ ক্রিস্টালে প্রতিফলিত হয় এবং পিলারের মতো আলোক দিপ্তীর সৃষ্টি করে।