আলাউদ্দীন নামের এক পথচারী বলেন,‘ ঈদগাঁও বাস স্টেশনে সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে আমি দৌঁড়ে পালাচ্ছিলাম। এমন সময় এহসান নামের এক সেনাসদস্যকে গাড়ি থেকে নেমে পথচারীদের ফুল দিতে দেখে আমিও তার দিকে এগিয়ে যাই। তিনি আমার হাতেও ফুল ধরিয়ে দেন।’ 

পথচারী আলাউদ্দিন সোমবার আরো বলেন, পথচারীদের সবার হাতে ফুল দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনাভাইরাস সম্পর্কে অবগত করছেন। একই সঙ্গে বিনা কারণে বাজারে ঘোরাঘুরি না করে বাড়িতে অবস্থান করার অনুরোধ জানাচ্ছেন সেনা সদস্যরা।

যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখলেই ভয়ে মানুষ পালায় সেখানে সেনারাই এগিয়ে গিয়ে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন লোকজনের হাতে। সেনা সদস্যরা বিনয়ের সাথে বলছেন, ‘আজ ভয় নয়, আজ আমাদের সবাইকে সচেতন হবার সময়। সচেতন হয়েই মরণব্যাধী করোনা থেকে সবাইকে রক্ষা পেতে হবে।

কক্সবাজারের রামুর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা কক্সবাজার জেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮টি উপজেলা জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। সেনারা প্রতিটি স্টেশনে লোকজনদের ফুলের তোড়া দিয়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

পেটের দায়ে ঈদগাঁও বাস স্টেশনে মনিরুজ্জমান তার রিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যাত্রীর জন্য। তিনি বলেন, এমন সময় সেনাবাহিনীর এক সদস্য আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছিল। কিন্তু সেনা সদস্য আমাকে হাতে ফুল দিয়ে সাহস যোগিয়ে বললেন চাচা, ভয় নেই। যদি সম্ভব হয় বাড়ি থেকে একটু কম বের হবেন।

রিকশাচালক মনিরুজ্জামান বলেন, গরিবের প্রতি সেনাবাহিনীর এমন ভালোবাসা দেখে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমি সেনা সদস্যদের সম্মান জানাতে সঙ্গে সঙ্গে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।’ তিনি আরো জানান, অনেকেই তার মতো বাড়ি ফিরে গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সারা দেশে এক প্রকার অঘোষিত লকডাউন চলছে। চারিদিকে আতঙ্ক। ফাঁকা রাস্তাঘাট। বন্ধ গণপরিবহণ ও দোকানপাট। এ পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতন রাখার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার আটটি উপজেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন তাদের সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। 

সেনা সদস্যরা বলেন, সকলে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না, আতঙ্ক না ছড়িয়ে অন্যকে সহায়তা করুন। টহলকালে সেনাবাহিনী হ্যান্ড মাইক দিয়ে জনসাধারণকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়ার এবং সচেতন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সেনাসদস্যরা। এ ছাড়া হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মেনে চলতে অনুরোধ করা হয় মাইকিংয়ে।  

এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, করোনা সচেতনতায় ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে সেনাবাহিনী। অযথা বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখা মানুষদের বুঝিয়ে শুনিয়ে গৃহে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানাতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।