জবি প্রতিনিধি, এভিগান (Avigan), জাপানের এই ওষুধের নাম আমরা কমবেশি সবাই এখন শুনছি। গত কয়েকদিন থেকেই খুব আলোচনা চলছে জাপানের এই এন্টিভাইরাল ওষুধটি নিয়ে।জাপানের Fujifilm Group প্রথম এই ওষুধ বাজারে আনে এবং ২০১৪ সালে জাপানিজ ফ্লু এর বিরুদ্ধে কার্যকরী হিসেবে জাপানে এই ওষুধকে অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আমেরিকায় ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষার পরে এই ওষুধকে ইনফ্লুয়েঞ্জার নিরাময়ে অনুমোদন দেয়।সাধারণত তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার পর সেই ওষুধকে প্রতিষেধক হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়।  তবে সবচেয়ে আশা জাগানিয়া তথ্য আসে ২০২০ সালের মার্চে। চীন যখন কভিড-১৯ এ সম্পূর্ন বিপর্যস্ত তখন তারা দেখতে পেল এভিগান করোনাভাইরাস নিরাময়ে কার্যকর এবং ১৫ই মার্চ চীন এই ওষুধকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে ইতালি ২২শে মার্চ পরীক্ষামূলক ভাবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত তিনটি অঞ্চলে এই ওষুধের অনুমোদন দেয়। 

জাপানে ফ্লু এর বিরুদ্ধে এই ওষুধ কার্যকরী হলেও জাপান এখন কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকারীতা পরীক্ষা করছে। গত ৩১ শে মার্চ জাপান তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষার কথা ঘোষণা দিয়েছে।যদিও এখনও তারা সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেনি। এরমধ্যে গত ৯ এপ্রিল, Fujifilm Group এর প্রেসিডেন্ট কেনজি সুকেনো জানান আমেরিকাতে দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষা খুব শীঘ্রই শুরু হবে।আনুমানিক পঞ্চাশজন আক্রান্তের মধ্যে এই প্রতিষেধকের ভূমিকা পরীক্ষা করা হবে। 

প্রশ্ন হচ্ছে যে ওষুধ নিয়ে এত আলোচনা, সেই ওষুধ কিভাবে কাজ করে? এভিগান (Avigan) যার জেনেরিক বা শ্রেণীগত নাম favipiravir। ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে পোষকের ডি এন এ এবং আর এন এ ব্যবহার করে। আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি করোনাভাইরাস একটি আর এন এ ভাইরাস। এই ভাইরাস পোষক দেহের অভ্যন্তরে  আর এন এ পলিমারেজ এনজাইমের সহায়তায় তার আর এন এ এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এভিগান পলিমারেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় বাধা প্রদান করে ফলে ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এভিগান মানুষের ডি এন এ এবং আর এন এ সংশ্লেষণে কোন বাধা প্রদান করে না এবং কোন টক্সিন উৎপন্ন করে না।তাই আশা করাই যায়, এই প্রতিষেধক আমাদের এই মহামারী থেকে রক্ষা করবে।
সকল ক্লিনিকাল পরীক্ষার পরে এভিগান সফল হলে তা অবশ্যই সমগ্র বিশ্বের জন্য লাভজনক হবে। জাপান ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে বিশটি দেশে এই ওষুধ তারা বিনামূল্যে সরবারহ করবে। প্রাথমিক লিস্টে বাংলাদেশ না থাকলেও আশার কথা হচ্ছে ওষুধ শিল্পে আমরা যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ন। ইতিমধ্যেই গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যালস বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমো ফার্মাসিউটিক্যালস এই ওষুধ প্রস্তুত শুরু করেছে। বিকন ফার্মা ইতিমধ্যে  সরকারি ওষুধ জনপ্রশাসন অধিদপ্তরে ৪০০০ ট্যাবলেট প্রদান করেছে যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। প্রতি ২০০ গ্রাম ওষুধের দাম আনুমানিক ৪০০ টাকা হতে পারে এবং একজন আক্রান্ত রোগীর পুরোপুরি সুস্থতার জন্য ৪০ টি ওষুধ প্রয়োজন হবে।

কোভিড-১৯ এর মহামারী আগ্রাসনে যখন আমরা ধীরে ধীরে আক্রান্ত হতে শুরু করেছি তখন জাপানের এভিগান আমাদের দেখাচ্ছে আশার আলো। চীন, জাপানে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সফল হওয়া এই ওষুধ বাংলাদেশেও সফল হবে এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

তথ্যসূত্রঃ Fujifilm, The NYtimes, The japantimes, Wikipedia, The dailystar

লেখকঃ মাকসুদুর রহমান শিহাব, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।