দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)। এর কাজ একেবারে শেষের দিকে। বেড বসানোর কাজ প্রায় শেষ। এক্সপো জোনে ফ্লোরম্যাট বসানোসহ রোগীর বেড, ফার্ণিচার, আগে থেকে তৈরি করে রাখা ডাক্তার, নার্স ও সার্পোটিং স্টাফদের কক্ষগুলোও প্রস্তুত। এক্সপো জোন ও তিনটি হলরুমে দুই হাজার ১৩ বেডের আইসোলেশন সেন্টারের পাশাপাশি ৭১ বেডের আইসিইউ ইউনিট থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ করতে দিনে-রাতে চলছে কাজ। 

আজ শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) আইসিসিবি’তে করোনা রোগীদের জন্য নির্মাণাধীন হাসপাতালের কাজের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ওসমান সরোয়ার। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‌হাসপাতালের মূলকাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। কিছু আনুসঙ্গিক কাজ এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয়নি, এগুলোর কাজ চলছে। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা হাসপাতাল চালু করার জন্য যে অন্যন্য সুবিধাগুলো রয়েছে সেগুলো পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত হাসপাতাল সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে।

আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন জানিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে দুটি ব্লকে ৭৫০টি বেড বসানো হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়েছিল, আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই আমরা হাসপাতালের কার্যক্রমে যেতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সরকার ও বসুন্ধরা গ্রুপ একই সাথে সমন্বয় করে কাজগুলো করে যাচ্ছি। আমরা সন্তুষ্ট যে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। দেড়শ পাকা টয়লেট তৈরি করা কিন্তু অনেক কঠিন কাজ, আমাদের এ ট্রেন্ডটা ছিল বলেই বসুন্ধরা গ্রুপ এটা দিতে পারছে। আগামী ২৭-২৮ তারিখের মধ্যে রোগী সেবার জন্য এটা প্রস্তুত থাকবে বলে আশা করি। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে যেটা জেনেছি তাদের সিদ্ধান্ত হলো যে হাসপাতলের শতভাগ কাজ সম্পূর্ণ কাজ হলে সেবার জন্য খোলা যাবে। এটা যেহেতু ভাইরাস স্ট্রিটমেন্ট হবে। চিকিৎসা চলাকালীন কোনো নির্মাণ কাজ করা যাবে না। সেই সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি আমাদের যে প্রস্তুতি এটা একেবারে দ্বারপ্রান্তে, সকল সরঞ্জাম এখানে চলে আচ্ছে এখন শুধু এগুলোকে স্থাপন করা হবে। 

গত ১২ এপ্রিল থেকে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অস্থায়ী হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৫ দিনের মধ্যেই আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ হিসেবে আগামী ২৭ এপ্রিলের আগেই হাসপাতালের সবকাজ সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করার কথা। দিন-রাত কাজ হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে দেশের এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দশ কোটি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা। এর পর প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর একটি দল আইসিসিবি পরিদর্শন করে। পরে এটাকে অস্থায়ী হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে দুই হাজার ১৩ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ করছে। এর বাইরে সেখানে হবে ৭১ বেডের আইসিইউ ইউনিট। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো জোন, দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। যত দিন এ মহামারি থাকবে এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।