দীর্ঘ এক মাস পর ফের দেশের মসজিদগুলোতে নামাজের জামাতে শুরু হয়েছে মুসল্লিদের ভিড়। করোনা পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে মসজিদে জামাতে নামাজের অনুমতি পাওয়ার প্রথম দিনেই বৃহস্পতিবার জোহরের জামাত থেকে মসজিদে আসা শুরু করেন মুসল্লিরা। অনেকে আজানের আগেই উপস্থিত হন মসজিদে। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মুসল্লিদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করেই মসজিদে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়।
এর আগে বুধবার ধর্মমন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সহ ১২টি শর্ত সাপেক্ষে বৃহস্পতিবার জোহর থেকে দেশের সব মসজিদে সুস্থ মুসল্লিদের জন্য ৫ ওয়াক্ত এবং তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর লালবাগের ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদে দেখা যায়, জোহরের আজানের সময় হতে তখনও মিনিট দশেক বাকি। ভেতরে তিন প্রবেশপথে জীবাণুনাশক স্প্রে হাতে দাঁড়িয়ে তিনজন মানুষ। ভেতরে দেখা গেল শতাধিক মুসল্লি। কেউ নামাজ পড়ছেন কেউ বা কোরআন তেলাওয়াত করছেন। তবে যারাই ভেতরে প্রবেশ করছেন হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করেই তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।
আজারের আগেই অনেক মুসল্লির উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদের একজন খাদেম বললেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ৬ এপ্রিল থেকে মসজিদে মুসল্লিদের অবাধ আগমন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি ওয়াক্তের নামাজে মাত্র পাঁচজন ও শুক্রবারের নামাজে (জুমা) ১০ জন এবং রোজার শুরুর পর ১২ জন নিয়ে তারাবিহর নামাজ হচ্ছিল। এক মাসেরও বেশি সময় পর আজ বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের সময় থেকে শর্তসাপেক্ষে সকল মুসল্লির মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার কারণে অনেকে আগেই মসজিদে এসে শোকরানা নামাজ পড়ছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে সকাল থেকেই মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুনাশক সামগ্রী দিয়ে ধোয়ামোছা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মসজিদের ফ্লোর থেকে কার্পেট তুলে নিয়েছেন। মসজিদে প্রবেশপথেই জীবাণুনাশক, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে তবে প্রবেশ করানো হচ্ছে। আবার নামাজ শেষে মসজিদ ধোয়ামোছা করা হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ ও লালবাগের শাহী মসজিদ সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সকাল থেকেই মসজিদের চৌহদ্দিতে ধোয়ামোছা চলছে। দুটি মসজিদে এর আগে কার্পেট বিছিয়ে নামাজ পড়ানো হলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্পেট তুলে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন এরশাদুল হক বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই তারা জোহরের ওয়াক্ত থেকে মুসল্লির জন্য মসজিদের প্রবেশপথ খুলে দেবেন। সকাল থেকেই তারা মসজিদ ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখছেন। কার্পেটের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে-এমন আশঙ্কায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কার্পেট তুলে রাখা হয়েছে।
মসজিদে নামাজের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া ১২ দফা শর্তের মধ্যে রয়েছে-মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিস্কার করতে হবে, মুসল্লিগ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন; মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে; প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে, সুন্নাত নামাজ ঞরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
অন্য শর্তগুলো হচ্ছে- কাতারে নামাজে দাড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ তিনফুট পরপর দাঁড়ানো; এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করা; শিশু, বয়বৃদ্ধ, যে কোন অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়েঅজিত ব্যক্তি জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকরল্পে মসজিদের ওজুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না; সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত কল্পে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে; মসজিদে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা যাবে না।
এসব শর্ত পালন সাপেক্ষে প্রত্যেক মসজিদে সর্বোচ্চ পাঁচজন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইতেকাফ-এর জন্য অবস্থান করতে পারবেন; করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষঅ পাওয়ার জন্য নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে এবং খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- এসব নির্দেশনা লংঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় ধর্মমন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।