কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় মুগসাইর এগার গ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে নাইট গার্ড নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

গত ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার মুগসাইর এগার গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে নাইট গার্ড নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। এতে ম্যানেজিং কমিটির ছয় লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য শফিকুল ইসলাম স্থানীয় জাহের আলীর ছেলে আলামিনকে নাইট গার্ডে চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়। আলামিন দুই লাখ টাকা শফিকুলকে দেয়। পরীক্ষার একদিন আগে পর্যন্ত সময়ে বাকী ৩ লাখ টাকা পরিশোধ না করতে পারায় তাকে বাদ দেয়া হয়। তাৎক্ষনিক আমির হোসেনের ছেলে মনিরুল ইসলাম ৬ লাখ টাকা শফিকুলকে দিলে পরীক্ষায় মনিরকে উত্তীর্ণ করা হয়। নাইট গার্ড নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডে দেবীদ্বার উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, মুরাদনগর সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ডিডি’র প্রতিনিধি), স্থানীয় এমপি’র প্রতিনিধি জাফরগঞ্জের মীর আব্দুল গফুর কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম শামীম, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাস্টার আলী হোসেন, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি কাজী সুলতান আহমেদ, ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


এ বিষয়ে নাইট গার্ড পরীক্ষায় অংশ নেয়া আলামিন বলেন, চাকরির জন্য আমার সাথে ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য শফিকুল ইসলামের সাথে ৫ লাখ টাকা চুক্তি হয় আমি তাকে দুই লাখ দেই। ৯নং সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার নোয়াবআলী কাকাও বিষয়টি জানেন। আমি বাকী ৩ লাখ টাকা যোগাড় করতে না পারায় আমার টাকা ফেরত দেয় এবং মনিরের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে ওকে পরীক্ষায় পাশ করাইছে। এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার নোয়াবআলী বলেন, নাইট গার্ড চাকরির জন্য আলামিন ২ লাখ টকা শফিকুলকে দিছে। পরর্বীতে শফিকুল টাকা ফেরতও দিছে আমি যতটুকু জানি। এর বেশী আর কিছু বলতে পারবো না।
বিদায়ী নাইট গার্ড জুনাব আলী আক্ষেপ করে বলেন, এই স্কুল নিজের হাতে গড়া। অনেক কষ্ট করে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি নাইট গার্ডে চাকরী নেই। চাকরির শেষ সময়ে এসে শারিরিকভাবে একটু দূর্বল হয়ে পড়ি। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর আমার বড় ছেলে লিটন নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করে।

ম্যানেজিং কমিটি ও স্কুলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আশ্বাস দেয় যে, লিটন নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করতে থাকুক। যখন নিয়োগ হবে তখন লিটনকেই নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার ছেলেকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য একজনকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দিতে যাচ্ছে।


এ বিষয়ে মো. লিটন মিয়া বলেন, আমাকে স্কুলের নাইট গার্ড নিয়োগের আশ্বাস দিলে আমি সব কিছু ছেড়ে স্কুল নিয়েই পড়ে থাকি। মাত্র ২ হাজার টাকা বেতনে আমি নাইট গার্ডের ডিউটি পালন করছি। এভাবে প্রায় ৫টি বছর কেটে গেছে। আমি ভ্যান গাড়ী চালাই। আমি গরীব মানুষ। এই ৫ বছরে আমি অনেক দেনা হয়ে পড়েছি। বউ বাচ্চা নিয়ে খুবই অসহায় অবস্থায় আছি। নাইট গার্ডের চাকরিটা হলে হয়তো সবকিছু কাটিয়ে উঠতে পারতাম। আমার সব গেলো। আমার ভবিষ্যৎ কি? এই ৫ বছরের দায়ভার কে নিবে?
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এলাকাবাসীর কয়েকজন বলেন, শফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হওয়ায় তার বিষয়ে ভয়েও কেউ মুখ খুলেনা। স্কুলটাকে লুটপাট করে শেষ করে দিছে। স্কুলের গাছ বিক্রসহ বইপুস্তক যা আছে সবই বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয় শফিকুল। শফিকুলের সাথে একযোগে সকল অপকর্মে অংশ নেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির (বিএসসি)।


এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির আলম মুঠোফোনে বলেন, বিদ্যালয়ের গার্ড নিয়োগে কোন অনিয়ম হয় নাই। টাকা-পয়সা লেনদেনের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।


এ বিষয়ে দেবীদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ফোন দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য শফিকুল ইসলামকে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।