দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অনেকের জন্য হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ-এর প্রয়োজন হলেও সেটি পাওয়া যাচ্ছে না বলে রোগীর স্বজনদের বেশ জোরালো অভিযোগ রয়েছে।

আইসিইউতে শয্যা জোগাড় করতে মানুষ যখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে বহু আইসিইউ শয্যা খালি আছে।

গতকাল শনিবার (২৭ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে মোট ১৪০৮৭টি শয্যা রয়েছে। এর বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৪৮৪৪ জন রোগী। অর্থাৎ হাসপাতালের প্রায় ৬৫ শতাংশ শয্যা খালি।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কভিড-১৯ রোগীদের জন্য ৩৮৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর বিপরীতে রোগী আছে ১৯১ জন। অর্থাৎ ১৯৭টি আইসিইউ শয্যা খালি। যে পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে তাতে কভিড-১৯ রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে কোনও সমস্যা হবার কথা নয়।

সরকারি পরিসংখ্যান যাই বলুক, বাস্তব চিত্র তার চেয়ে আলাদা। ঢাকার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন কয়েকদিন আগে তার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আইসিইউতে একটি শয্যা জোগাড় করার জন্য পুরো রাত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ধর্না দিয়েছেন তিনি।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছিলেন, আপনাদের আইসিইউ দরকার হতে পারে, আপনারা খুঁজতে থাকুন। তখন আমরা পাগলের মতো খুঁজেছিলাম। কোনো হসপিটাল থেকে রেসপন্স পাইনি।’ 

একথা ঠিক যে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশের বেশি কভিড-১৯ রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন অথবা তাদের হাসপাতালে যাবার প্রয়োজন হচ্ছে না।

অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে রোগী এবং তাদের পরিবারের মধ্যে এক ধরণের ভয়ও তৈরি হয়েছে। সেজন্য অবস্থা একেবারে খারাপ না হলে কেউ হাসপাতালে যেতে চায় না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একদিকে বলছে আইসিইউ শয্যা খালি আছে, অন্যদিকে বিভিন্ন রোগীর পরিবার বলছে হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা পাওয়া যায়না। এ অবস্থা কেন তৈরি হলো?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা হয়েছে যে কোন হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য শয্যা খালি নেই। তিনি মনে করেন, কোন হাসপাতালে কয়টি আইসিইউ এবং সাধারণ শয্যা খালি আছে সেটি প্রতিদিন প্রকাশ করা উচিত।

খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এই পরিসংখ্যানটা যদি জানানো হতো, মানুষজনও তাহলে সে অনুযায়ী এলাকা বাছাই করে যেতে পারতো এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারতো।

রোগীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, কোনো কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি থাকলেও সেটি সাধারণ রোগীদের দেবার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখায়।

মহামারির এ পরিস্থিতিতে আইসিইউতে দু-একটি শয্যা সবসময় বিশেষ প্রয়োজনে খালি রেখে দেয়া হয় বলে সাধারণ রোগীদের অভিযোগ। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। 

সূত্র : বিবিসি বাংলা