জনগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করল, বাধা দিল না বলে ক্ষোভ হাইকোর্টের।
জনগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করল, বাধা দিল না বলে ক্ষোভ হাইকোর্টের।

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কী অ্যাকশন নেয়া হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট।  প্রকাশিত খবর বৃহ্স্পতিবার হাইকোর্টে উপস্থাপনের পর আদালত জনগণের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন।

দিনদুপুরে স্ত্রী আয়েশা আক্তারের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতে বলেন, যতটুকু জেনেছি, এখনও মামলা হয়নি। এ ঘটনার বিচার যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয় ও বিচারহীন হয়, তাহলে আরও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তবে বিচার হবে আশা করছি।

এ সময় পাশ থেকে অপর এক আইনজীবী আদালতকে জানান, রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে নিহত যুবক রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ এ মামলা করেন। মামলার পরপরই চন্দন নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এর আগে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দেশের বাংলা ও ইংরেজিসহ বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এমন একটি হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটল। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রভাব ফেলেছে।

এ সময় প্রকাশ্যে এই যুবককে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মর্মাহত হয়ে জনগণের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কী পদক্ষেপ (অ্যাকশন) নেয়া হয়েছে, তা আজ দুপুর দুইটার মধ্যে জানাতে বলেছেন সংশ্লিষ্টদেরকে। বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনলে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মন্তব্যের পাশাপাশি এ আদেশ দেন।

আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তায় প্রকাশ্যে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করল, অথচ স্ত্রী ছাড়া তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসলে না। সবাই পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল আর ভিডিও করল। এটা আমাদের জনগণের ব্যর্থতা। দেশের মানুষ তো এমন ছিল না। সামাজিকতা এখন কোথায় দাঁড়িয়েছে?

আদালত আরও বলেন, জনগণকে কী বলবো, জনগণের বিষয়ে কী আদেশ দেব? রাজপথে একজন মানুষকে দিনের বেলায় এভাবে কুপিয়ে মারল আর আশে পাশের মানুষ সবাই তামাশা দেখছে, পাঁচজন লোকও আসল না বাঁধা দিতে। বুঝলাম সন্ত্রাসীরা ভয়ঙ্কর। তার পরেও তার পরেও তো মানুষ এগিয়ে আসতে পারতো।

এ সময় আদালত বলেন, রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার আত্মীয়-স্বজন ও দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও মর্মাহত।

উল্লেখ্যে, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে (২২) প্রকাশ্যে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। পরে বিকেল তিনটার দিকে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।