জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ ও মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে কাজ করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৫০ হাজারবার কোরআন খতম এবং জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সমাজসেবা অধিদপ্তরে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ একটা শোক সইতে পারে না।
আর আমরা কী সহ্য করে আছি—শুধু একটা চিন্তা করে যে এই দেশটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান। কাজেই আমার যতটুকু সাধ্য, সেইটুকু আমরা করে দিয়ে যাব যেন তাঁর আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই খুনিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য এবং কিছু উচ্চপদস্থ ছিল, যারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) যারা হত্যা করেছে তারা ঘৃণ্য। তাদের বিচার করেছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেই শক্তি দিয়েছেন আমাদের। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে দিয়ে তাদের বিচার করতে পেরেছি। এতে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি।’
আওয়ামী লীগকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রেখে দেশ সেবার সুযোগ করে দেওয়ায় দেশের মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এতিমদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা মনে রাখবে, তোমরা একেবারে একা না। আমি আছি তোমাদের পাশে। আমি, আমার ছোট বোন সব সময় তোমাদের কথা চিন্তা করি।’ এতিমদের কষ্ট কেমন, তা নিজে উপলব্ধি করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই কষ্টটা আমরা বুঝি। এই কষ্টটা আরো বুঝলাম ১৫ আগস্ট। একদিন সকালে উঠে যখন শুনলাম আমাদের কেউ নেই।’
সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলকেও যে খুনিরা রেহাই দেয়নি, সে কথা মনে করে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ছোট্ট ভাইটি—আমি এখনো এই প্রশ্নের উত্তর পাই না, তার মাত্র ১০ বছর বয়স। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সে একদিন সেনাবাহিনীতেই যোগদান করবে। আর নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস, তাকে এই সেনাবাহিনীর সদস্যরাই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করল। তার অপরাধ কী জানা নেই আমার।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ড যখন চলছিল তখন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর ছয় বছর তাঁদের নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাবা-মায়ের লাশও দেখতে পাইনি। কবরও জিয়ারত করতে পারিনি। দেশে আসতেও পারিনি। এভাবে আমাদের বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল। এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে থাকার কী কষ্ট, এটা যারা আমাদের মতো ছিল তারা জানে।’