চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুর রেজা ইমন। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল সভাপতি নির্বাচিত হন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর। বিয়ে করলেও সভাপতির পদ আঁকড়ে রেখেছেন তিনি। মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি গঠনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব পান তিনি। ধুমধাম করে বিয়েও করেছেন এরই মধ্যে। এখনো তিনি সভাপতির দায়িত্বে আছেন। রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলামও বিবাহিত। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই দায়িত্ব পেলেও এখনো তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের অন্তত ৩০ জনের বেশি বিবাহিত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটি দুটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি হচ্ছে না; যদিও কমিটিতে পদ পেতে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপ তৈরি হয়েছে সংগঠনের ভেতর।
সূত্র জানায়, মেয়াদ শেষ হলেও জেলা কমিটির সম্মেলন বা নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ায় তৃণমূল ছাত্রলীগে দেখা দিয়েছে হতাশা। বিবাহিত ও বয়স্করা শীর্ষ পদ আঁকড়ে ধরে থাকায় নতুনরা জায়গা পাচ্ছে না। সক্রিয়রা পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সংঘর্ষ বা হানাহানির ঘটনাও ঘটছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে নতুন কমিটির বিষয়ে ধরনা দিলেও কোনো কাজে আসছে না।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সব কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর, যা চলতি বছরের ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। সারা দেশের ১১১টি জেলা ইউনিটের মেয়াদ এক বছর করে। সে অনুযায়ী, এখন মাত্র তিনটি কমিটির মেয়াদ আছে। এগুলো হলো—নড়াইল, চাঁদপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিট। এসব জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে চলতি বছর।
জেলা ইউনিটগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, সিলেট জেলা ও মহানগর, যশোর, গাজীপুর মহানগর ও ময়মনসিংহ মহানগরে বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। হবিগঞ্জ জেলার কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের মোট ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো কমিটি নেই।
তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর দাবি করেছে যে সারা দেশে ১১১টি জেলা কমিটির মধ্যে পাঁচটির মেয়াদ এখনো আছে। কিন্তু এসব কমিটির মধ্যে নড়াইল, চাঁদপুর ও কিশোরগঞ্জ ছাড়া কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির মেয়াদ শেষ।
কিন্তু ছাত্রলীগের কমিটির তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩১ জুলাই।
২০১৮ সালে ২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। এক বছর গড়াতেই অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অপসারণ করা হয়। এর আগে ১৩ জুলাই কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠন করেন তাঁরা। এই কমিটি দুটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। শোভন-রাব্বানী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি কলেজের সম্মেলন করলেও নতুন কমিটি গঠন করতে পারেননি।
শোভন-রাব্বানীকে অপসারণের পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কয়েক মাস ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পরে তাঁরা পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পান। বর্তমানে জয়-লেখক ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করলেও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদকে সচল ও তৃণমূল ছাত্রলীগকে পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন। এক বছর ধরে দায়িত্ব পালনকালে মাত্র তিনটি জেলা কমিটি গঠন করেছেন তাঁরা। অন্য আর কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন কিংবা নতুন কমিটি গঠন করতে পারেননি, বরং বিভিন্ন অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বহিষ্কার ও কমিটি স্থগিতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তাঁদের কর্মকাণ্ড।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশের ছাত্রলীগকে সুশৃঙ্খলভাবে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ও সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে কথা বলছি। করোনার কারণে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। আমরা মেয়াদ শেষ হওয়া কমিটি নতুন করে পুনর্গঠন করব।’
সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা রকম ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সব সমস্যা মোকাবেলা করে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যেসব জেলার কমিটি নেই, সে বিষয়ে আলোচনা করছি। বিভাগ পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসছি। আমরা শিগগিরই নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে ভালো কিছু একটা সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।’