ই-পাসপোর্ট পেতে গত ৩০ জানুয়ারি অনলাইনে আবেদন করেছিলেন ব্যবসায়ী আতাহার আলী। আবেদন গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি ছবি তোলার ও আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পান। ওই দিন তিনি সেখানে গিয়ে ছবি তোলেন। এরপর তাঁকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ই-পাসপোর্টের বই নেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু ওই তারিখে তিনি ই-পাসপোর্ট পাননি। এরপর প্রায় আট মাস চলে গেলেও এখনো তিনি ‘পাসপোর্ট রেডি’ এমন এসএমএস পাননি। আতাহার আলীর মতো আরো অনেকের কাছে ই-পাসপোর্ট নিয়ে এ ধরনের ভোগান্তির কথা জানা গেছে।
মূলত ই-পাসপোর্টের পুরো কার্যক্রমটি টেকনিক্যাল হওয়ায় এর জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক দক্ষ কর্মী যেমন নেই, একইভাবে আবেদনকারীর অজ্ঞতাও দায়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ই-পাসপোর্টের কারিগরি মান বাড়লেও দক্ষ কর্মী এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। পাসপোর্ট অফিসে যাঁরা এমআরপি পাসপোর্টের কাজ করতেন, তাঁদের দিয়ে ই-পাসপোর্টের কাজ করানো হচ্ছে। এর জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের পুরো বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় টেকনিক্যাল বিষয় জড়িত। বিষয়টি রপ্ত করতে এসব কর্মীর সময় লাগবে।
অন্যদিকে আবেদনকারীদের মধ্যেও রয়েছে সমস্যা। অনেকে মোবাইল ফোন থেকে আবেদন করার চেষ্টা করেন। এতে সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে আবেদনকারীদের কম্পিউটারের মাধ্যমে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আবার ই-পাসপোর্ট করার জন্য যে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে তাতে রাজধানীতে যে থানাগুলো রয়েছে সেসব থানার নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে বড় থানা ভেঙে নতুন আরো থানা বাড়ানো হয়েছে। সেসব নতুন থানার নাম সফটওয়্যারে না থাকায় আবেদনকারী যখন নতুন থানার নাম দিচ্ছেন তখন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সফটওয়্যারে একটি ডট বদলানোও কঠিন। এ ছাড়া দেখা গেছে, অনেকে আবেদন করার সময় ইন্টারনেট ড্রপ করেন। এতে আবেদনে সমস্যা তৈরি হয়। আবার অনেকে আইফোন থেকে আবেদন করতে চান, কিন্তু এতে সিস্টেমে ঢোকা যায় না। অনেকে ঠিকানা ভুল করেছেন। কারো কারো জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা এক স্থানে, আবেদন করছেন অন্যস্থান থেকে। অনেকের বারকোডের প্রিন্টে কালি না পড়ায় সেগুলো মেশিন রিড করতে পারছে না। আবার অনেকের ১০ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট না হওয়ায় সেগুলো মেশিন রিড করতে না পারায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এদিকে ই-পাসপোর্টসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। বেড়েছে প্রিন্ট ও আবেদন জমা নেওয়ার সক্ষমতা। দিন দিন বাড়ছে ই-পাসপোর্টের আবেদনের সংখ্যাও। শুরুর দিকে রাজধানীতে তিনটি পাসপোর্ট অফিস দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে দেশের ৪৩টি পাসপোর্ট অফিসে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে দেশের বিভাগীয় ও পুরনো ১৯টি জেলার পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে দেশজুড়ে পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছি আমরা। চলতি মাসে সম্ভব না হলেও আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশের সব পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট চালু করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে। প্রতিদিন ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাড়ছে পাসপোর্ট অফিসের সংখ্যা। গত সেপ্টেম্বরে ৩৩টি পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছিল। গত কয়েক দিনে আরো বেড়ে বর্তমানে ৪৩টি পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে।’
গত ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ই-পাসপোর্টের আবেদন নেওয়া হচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে। তারপর শুরু হয় ক্যান্টনমেন্ট, সচিবালয়সহ রাজধানীর সব পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট সেবা। করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সব কার্যক্রম বন্ধ হলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার পুরোদমে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।