বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক, একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও গবেষক রশীদ হায়দার আর নেই।
আজ মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
রশীদ হায়দারের মেয়ে শাওন্তি হায়দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি।
রশীদ হায়দারের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৫ জুলাই পাবনার দোহারপাড়ায়। তাঁর পুরো নাম শেখ ফয়সাল আবদুর রশীদ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন হায়দার, ডাকনাম দুলাল। তাঁর ভাইয়েরাও সবাই বিখ্যাত। এঁরা হলেন নাট্যকার জিয়া হায়দার, কবি দাউদ হায়দার, কবি মাকিদ হায়দার, নাট্যকার আরিফ হায়দার। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় জনপ্রিয় পত্রিকা চিত্রালীতে কাজ শুরু করেন রশীদ হায়দার। তাঁর বড়ভাই জিয়া হায়দারও ওই পত্রিকায় কাজ করতেন। জিয়া হায়দার নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে চাকরি নিয়ে চলে যাওয়ার আগে তাঁর অনুরোধে কর্তৃপক্ষ ছোট ভাইকে চাকরিতে নিয়োগ দেন। ১৯৬৪ সালে চিত্রালীর পাশাপাশি পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের মুখপত্র পরিক্রম পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তিনি।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ত্রৈমাসিক কৃষিঋণ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন রশীদ হায়দার। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে চাকরি পান। দীর্ঘদিন চাকরির পর ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমির পরিচালকের পদ থেকে অবসর নেন। পরে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
বাংলা একাডেমিতে কর্মরত থাকাকালে রশীদের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারানো মানুষের স্মৃতিচারণা ১৩ খণ্ডের ‘স্মৃতি : ১৯৭১’। ১৯৬৭ সালে ১ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় রশীদ হায়দারের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নানকুর বোধি’। ১৯৭২ সালে দৈনিক সংবাদ-এ ধারাবাহিকভাবে লেখা শুরু করেন জীবনের প্রথম উপন্যাস ‘গন্তব্যে’। অর্ধেক মুদ্রিত হওয়ার পর কোনো এক অজানা কারণে লেখাটি তিনি আর লিখে শেষ করতে পারেননি। তবে বেশ পরে এটি অন্য নামে প্রকাশিত হয়।
১৯৭৪ সালে দিল্লিতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় তিন বছরের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ পান। তিন মাস ক্লাস করার পর বাংলা একাডেমির চাকরি হারানোর ভয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়। ১৯৬৪ সালে মুনীর চৌধুরীর পরিচালনায় তিনি অভিনয় করেন ‘ভ্রান্তিবিলাস’ নামে একটি নাটকে কিংকর চরিত্রে।
ছাত্রজীবনের শেষেও প্রায় ১০-১২ বছর রশীদ নাট্যজগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জিয়া হায়দারের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
রশীদ হায়দারের গল্প, উপন্যাস, নাটক, অনুবাদ, নিবন্ধ, স্মৃতিকথা ও সম্পাদনা মিলিয়ে ৭০-এর বেশি বই রয়েছে তাঁর। কথাসাহিত্যে অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০১৪), হুমায়ূন কাদির পুরস্কার, পাবনা জেলা সমিতি স্বর্ণপদক, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।