আগের তিন দিন বৃষ্টি-বাদলা মণ্ডপে যেতে বাদ সাধলেও মহানবমীতে আবহাওয়া ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। এ কারণে গতকাল রবিবার (২৫ অক্টোবর) দিনভর রাজধানীর মণ্ডপগুলোতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ভক্তরা অঞ্জলি ও ভোগ দিয়েছে। আনন্দ-উৎসবের মধ্যে নবমী পূজা ও সন্ধ্যা আরতি শেষে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করে।
আজ বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, গতকাল ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হয়েছে। করোনা সতর্কতার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মায়ের ভাগের প্রসাদ ছাড়া খিচুড়ি বা এজাতীয় প্রসাদ বিতরণ করা হয়নি। অনেকেই অঞ্জলি দিয়েছে বাসায় বসে। তবে নবমী পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা ছিল।
নবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেব-দেবীকে আহুতি দেওয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। আর নবমী পূজা হচ্ছে দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। তাই নবমী নিশীথে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাত বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয় ভক্তদের সামনে।
আজ বিজয়া দশমীর দিন সংক্ষিপ্ত পূজার পর দর্পণ বিসর্জন হবে। কোনো কোনো জায়গায় দেবীর অপরাজিতা পূজাও হবে। এদিন রাবণবধের জন্য দশেরা উৎসবও পালিত হয়। অসুর নিধনের পর তাঁর রক্ত দিয়ে দেবতারা বিজয়োৎসব পালন করেছিলেন। তাই দশমীর দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হবে। দশমী থাকবে সকাল ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত। দর্পণ বিসর্জনের পর বিকেলে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত ছেড়ে স্বর্গে ফিরবেন।
পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার কোলাকুলি হবে না। একইভাবে এবার দুর্গাপূজায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জনও হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধির কারণে বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে ১০ জন যেতে পারবেন।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
করোনা মহামারির কারণে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসবসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ থাকায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সন্ধ্যায় আরতির পর পূজামণ্ডপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতাও হয়নি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মণ্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা নেবে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় সব রাজনৈতিক দল, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
চণ্ডিপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়। এবছর সারা দেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবছর এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি।