শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহ পর আমরা চেষ্টা করে দেখব, সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না। তবে সবই নির্ভর করছে আগামী দিনের করোনা পরিস্থিতির ওপর। ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারতে করোনা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হচ্ছে। আগামী শীতে আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতিরও আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আগামী বছর যারা এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের কথা বিবেচনায় রেখে আমরা খুবই সীমিত পরিসরে, স্বাস্থ্যঝুঁকি একেবারেই যাতে না থাকে—এ রকম একটা ব্যবস্থা করে কী করা যায়, সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখছি। যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয় তাহলে আমরা সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে যাব।’
দীপু মনি বলেন, ‘এবার যাদের এইচএসসি দেওয়ার কথা ছিল, তারা কিন্তু পুরো সিলেবাস শেষ করে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু আগামী বছর যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের পড়াশোনায় কিছুটা হলেও ব্যাঘাত হয়েছে। ৮-৯ মাস ক্লাস করতে পারেনি। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য সীমিত পরিসরে হলেও এখন থেকেই নির্ধারিত পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যদি সময় দেওয়া যায়, তাহলে যে সিলেবাস, তা তারা হয়তো সম্পন্ন করতে পারবে। যদিও নানাভাবে ক্লাস করাচ্ছি। এর পরও সীমিত পরিসরে হলেও তাদের ক্লাসরুমে নিয়ে এসে যেখানে-যেখানে সমস্যাগুলো আছে, তা দুর করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, স্কুলে আসার অভ্যাস চলে যাচ্ছে। নানা বিষয় চিন্তা-ভাবনা করছি, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই নেওয়া হবে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে। আমরা আশা করি, এসএসসি পরীক্ষা পেছাতে হবে না। যদি প্রয়োজন হয় পরিস্থিতির কারণে, তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব। তবে চেষ্টা করব সময়মতো পরীক্ষা নেওয়ার।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে বা কারিগরিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ তাঁদের এটি চূড়ান্ত পরীক্ষা, এরপর তাঁরা কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন। কাজেই সে পরীক্ষাগুলোর যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হয়, তাহলে তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাই পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন করা সঠিক হবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো যা আমরা মনে করছি, তাদের পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এদের সংখ্যাও অত বড় নয়। আশা করছি, পরীক্ষা নিয়ে নিতে পারব। আমি আহ্বান জানাব—এখন থেকেই যেন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এক বা দুই মাস পর পরীক্ষা হলে যেন বলতে না হয় যে প্রস্তুতি নিতে পারিনি।’
স্কুলে দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে কোনটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হবে, সে রকম একটি পদ্ধতি বেছে নেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান প্রমুখ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনের পর গতকালই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকবে।